নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
নহে সামান্য ব্যাপার
শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুরের বক্তব্য ও কিছু কথা
সততা যুবসংঘ, রাহুথড় কর্তৃক আয়োজিত ২৪তম বাৎসরিক মহোৎসব ও মতুয়া দর্শন সম্পর্কে আলোচনা সভায় গত ২১/০৩/২০২৪ খ্রি. তারিখে ওড়াকান্দির ঠাকুর পরিবারের প্রতিনিধি শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে।
১। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “আমরা কথায় কথায় বলি মতুয়া ধর্ম; মতুয়া মতে শ্রাদ্ধ, মতুয়া মতে বিবাহ, ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো কিন্তু ঠিক না।”
Ø কথায় কথায় বলা ‘মতুয়া ধর্ম’ যদি ঠিক না হয়; তার অর্থ হলো আপনি ‘মতুয়া ধর্ম’-কে বিশ্বাস করেন না, মতুয়া দর্শনের বা মতুয়া ধর্মের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠা আপনার মতে ঠিক নয়। কিন্তু মতুয়ারা এখন মতুয়া দর্শনের স্বতন্ত্রতা বুঝতে শিখছে, গ্রন্থে যেটা পরোক্ষ হিসেবে আছে, মতুয়ারা সেটা প্রত্যক্ষ করতে চাইছে; এতে গাত্রদাহের কিছু নাই।
Ø মতুয়া মতে শ্রাদ্ধ, মতুয়া মতে বিবাহ; ‘মতুয়া মতে’ বলাটা যদি ঠিক না হয়, তবে মতুয়ারা হরিচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ মেনে, গুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ মেনে শ্রীশ্রীহরি-লীলামৃতের আলোকে যে ক্রিয়াকর্মগুলো করে, সেগুলোকে কোন মতের মধ্যে ফেলা হবে? বৈদিক মতে? পৌরাণিক মতে? বৈষ্ণব মতে? আমরা মতুয়া দর্শনকে যারা স্বতন্ত্র দর্শন ও মতুয়া ধর্মকে যারা স্বতন্ত্র ধর্ম বলে জানি, তারা ‘মতুয়া মতে’-ই বলব।
২। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “বলি বিবাহ-শ্রাদ্ধ – এ একটা সামাজিক ব্যাপার; এতে ধর্ম টেনে আনবেন না। সমাজের রীতিনীতি এটা। কেউ ইচ্ছা করলে লাগাবে, কেউ ইচ্ছা করলে লাগাবে না। যদি সমাজে বসবাস করে সবাই একমত পোষণ করে কোনোকিছু করেন আপনারা, করবেন। যেমন: যেকোনো কালীবাড়ি, যেকোনো হরিবাড়ি, যেকোনো রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে যুবক-যুবতী যাইয়ে সিন্দুর পরায়ে বিয়ে করে আসে। এটাও তো ---(শব্দটা বুঝা যাচ্ছে না) ধর্ম মতে বিবাহ। বিবাহ তো দশ প্রকার, আপনারা জানেন; তাই না? কেউ যদি ওড়াকান্দি যাইয়ে ঠাকুরকে সাক্ষী রেখে আচার মালা দিয়ে প্রাথমিকভাবে বিয়া করে, আবার বাড়ি গিয়ে সামাজিকভাবে বিয়া করে। যুগ তাই। যারা হরিচাঁদ ঠাকুরকে মান্য করে তারা তার সামনে আবদ্ধ হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য তো আমাদের কোনও বিতর্কের ই(কারণ) নেই।”
Ø বিবাহ-শ্রাদ্ধকে সামাজিক ব্যাপার বলেছেন। এর মধ্যে ধর্ম টেনে আনতে নিষেধ করেছেন। বিষয়টা পরিষ্কার নয়। বিবাহ-শ্রাদ্ধ যতটা-না সামাজিক, তারও চেয়ে বেশি ধর্মীয়। হরিচাঁদের আদর্শ তথা মতুয়া ধর্মকে তারক চন্দ্র সরকার ‘প্রশস্ত গার্হস্থ্য ধর্ম’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন; তো এই গার্হস্থ্য ধর্মে প্রবেশ করার সোপানই হলো বিবাহ। সেটার মধ্যে ধর্ম আসবে না! মতুয়া ধর্মের কথা বাদ দিলাম, হিন্দু বা সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেও যে বিবাহ হয়, সেখানে ধর্মগ্রন্থ হতে মন্ত্র/শ্লোক পড়েই বিবাহ হয়; তবে বিবাহ কীভাবে শুধুমাত্র সামাজিক ব্যাপার, সামাজিক রীতিনীতি হলো? ধর্ম দ্বারা, ধর্মগ্রন্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কোনওকিছু শুধু সামাজিক ব্যাপার হয় কী করে?
Ø বিয়েতে কেউ ইচ্ছা করলে ব্রাহ্মণ লাগাবে, কেউ ইচ্ছা করলে লাগাবে না। কিন্তু শর্ত দিছেন, সমাজে বসবাস করা সবাই একমত পোষণ করতে হবে। আমার ইচ্ছা যদি সমাজের কথার বিরুদ্ধে যায় বা একমত না হয়, তবে কী হবে? আমার ইচ্ছার কথা শুনব, নাকি সমাজের কথা শুনে বা সমাজের ইচ্ছায় আমার ইচ্ছাকে সলিল সমাধি দিব। আমার ইচ্ছা মানে মতুয়া আদর্শের কথা; সমাজের কথায়, সমাজের ভিন্নমতের কারণে কী আমি আদর্শ বিচ্যুত হব? স্পষ্ট করে বলি, সমাজের ঐক্য ধরে রাখার দায়িত্ব শুধু মতুয়ার নয়; মতুয়া মতে ক্রিয়াকর্ম করলে যদি সমাজের ঐক্য নষ্ট হয়, তবে আমি সেটাই বেশি করে চাই। সমাজের ঐক্য ধরে রাখতে, আমি যেটা বিশ্বাস করি, আমি যেটা মানি, সেটা বর্জন করতে পারব না; যদি সমাজ আমাকে একঘরে করে, তবে একঘরেই হবো। একঘরের দল মিলে নতুন সমাজ গ্রহণ করব। বিষয়টা ব্রাহ্মণ লাগানো বা না-লাগানো নিয়ে নয়; ব্রাহ্মণ্যবাদ গ্রহণ বা বর্জন নিয়ে। ব্রাহ্মণ্যবাদ বর্জনকে কেনো এবং কী উদ্দেশ্যে আপনি বা আপনার দোসরেরা ব্রাহ্মণ বর্জন বলে আখ্যা দিতে চাইছেন, তা পরিষ্কার নয়। সামাজিক-ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মে ব্রাহ্মণকে দিয়ে পৌরহিত্য না-করানো ব্রাহ্মণ্যবাদ বর্জনেরই একটা অংশ মাত্র। তার চেয়ে বড়ো কথা মন্ত্রে যা বলে বিবাহ ও শ্রাদ্ধ পড়ানো হয়, পুণ্য লাভের আশায় যে দান-দক্ষিণা করা হয়, যে ভুল তত্ত্ব বুঝানো হয়, করানো হয়; সেগুলো বর্জনের করাই বলা হয়; ব্যক্তি ব্রাহ্মণকে বর্জনের কথা কেউই বলে না। তাছাড়া, পৌরহিত্যে ব্রাহ্মণকে না-ডাকাকে ব্রাহ্মণ বর্জন বলে না; বা তাতে ব্রাহ্মণ বর্জনও হয় না।
Ø বিয়েকে আপনি দ্বি-বিভক্ত করে ফেলেছেন। প্রাথমিক বিয়ে এবং সামাজিকভাবে বিয়ে। বিভিন্ন মন্দিরে বিয়ে, এমনকি শ্রীধাম ওড়াকান্দির মন্দিরে বিয়েকেও আপনি প্রাথমিক বিয়ে বলেছেন। ওড়াকান্দি হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে আচার মালা বিনিময়ে বিয়ে হওয়ার পরে আবার যদি সামাজিকভাবে বিয়ে করতে হয়; তবে ওড়াকান্দির ঐ বিয়েকে বৈধ্যতা দেওয়া যায় না। অদ্ভুত! তাহলে সে ধরনের বিয়ে আপনারা দেন কেনো, যে ধরনের বিয়ের বৈধতা নেই। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদকে সাক্ষী রেখে, আচার মালা বিনিময় করে শুধু ওড়াকান্দির হরিমন্দিরেই নয়, হরিচাঁদ ঠাকুর বা গুরুচাঁদ ঠাকুরের যেকোনো মন্দিরেই; এমনকি মন্দিরে না-হলেও যদি কেউ বিবাহ করে; সে বিবাহ বৈধ্য, সে বিবাহকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সামাজিকভাবে পুনরায় বিয়ে করার কোনও কারণ নেই, যুক্তিও নেই। একই বর-কনের মধ্যে একাধিকবার বিয়ে হতে পারে না। একবার বিয়েই যথেষ্ট, সে মন্দিরে হোক, কিংবা গৃহে, কিংবা অন্য কোথাও; কোনও সমাজ যদি এই বিবাহকে অবৈধ মনে করে পুনরায় সামাজিকভাবে বিয়ে করতে বলে, তবে সেই সমাজের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন এসে যায়। সেই সমাজ বরঞ্চ ত্যাগ করা যায়, তবুও এই বিবাহকে অস্বীকার করা চলে না।
৩। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “খরচ বলি – স্বজাতি ভোজন; মতুয়া মতে যেগুলো করা হয় – সেখানে কিন্তু নিরামিষ রান্না হয়, আমিষ দেয়া হয় না; মহোৎসব হয়। ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িও সেই ---। গুরুচাঁদ ঠাকুর-সত্যভামা মা থেকে অদ্য-অবধি ঠাকুর বাড়ি যত মহোৎসব হয়েছে ঠাকুরগুলো দেহ রাখার পরে, আজ পর্যন্ত কোনও মাছ-মাংস দেয়া হয়নি। অর্থাৎ বৈষ্ণব-আচারে যে প্রসাদ, নিরামিষ প্রসাদ দেওয়া হয়। এ কারণে এটা নিয়ে বিতর্ক করবেন না আপনারা।”
Ø খরচ বা স্বজাতি ভোজন, যেটা শ্রাদ্ধান্তে করা হয়; আপনার মতে আপনারা সেটা করেন বৈষ্ণব মতানুসারে; এর অর্থ বলা যেতে পারে যে, শ্রাদ্ধাদিক্রিয়াও আপনারা বৈষ্ণব মতে করে থাকেন, মতুয়া মতে নয়। শুধুমাত্র আমিষের পরিবর্তে নিরামিষ খাবার দিলে সেটা কীভাবে বৈষ্ণব মতে হয়, আমার জানা নেই, জানা থাকার কথাও নয়; কারণ বৈষ্ণব মত শুধুমাত্র নিরামিষ খাবারের উপর নির্ভর করে হয় না, এর পিছনেও একটা নির্দিষ্ট দর্শন রয়েছে, কর্মপ্রণালী রয়েছে। যাই হোক, আপনারা কথিতমতে বৈষ্ণব মতে আছেন, তবে গয়ায় পিণ্ডদান করতে যান না কেনো? নিমাই তার পিতার কাজ করতে গয়ায় পিণ্ডদানও করেছিল; আপনাদের উচিত তাকে অনুসরণ করে গয়ায় পিণ্ডদান করা। আর বৈষ্ণব মতে খরচে মহোৎসব হয়, সেটা মতুয়া মহোৎসব কোনোভাবেই নয়; ঐ মহোৎসবে মতুয়াদের ডাকবেন না, বৈষ্ণবদের ডাকবেন। সমস্তরকম বৈদিকক্রিয়া থেকে মুক্ত করা মতুয়াদের এরকম বিধিমার্গযুক্ত মহোৎসবে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যদি মতুয়া মহোৎসবই দিতে চান, তবে ঐসব আজগুবি ক্রিয়াকলাপ থেকে মুক্ত হয়ে দিবেন। গাছেরও খাবেন, তলারও খাবেন; সেটা হবে না। মতুয়া মত আর বৈষ্ণব মত সর্বৈব এক নয়।
৪। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “মতুয়ারা শুধু নমশূদ্রের মধ্যে আবদ্ধ না। আজকে নড়াইল জেলার কথা চিন্তা করেন, শতকরা ৭৫ ভাগ লোক হচ্ছে পাল সম্প্রদায়ের লোক, সাহা, কুণ্ডু, বণিক, শীল সম্প্রদায়ের লোক, কায়স্থ, ব্রাহ্মণ লক্ষ লক্ষ হাজার হাজার নাম – এরা মতুয়া। হরিচাঁদ ঠাকুরের আমল থেকে এই পালেরা সবাই মতুয়া। হরিপালের নাম শুনছেন আপনারা, নড়াইলের। এখনও শতকরা ৯০ জন মতুয়া, তারা ব্রাহ্মণ বাদ দিতে রাজী না। আমরা নমশূদ্রদের ভিতরেও মাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজন। এরা মনে করেছে কী – বিয়ে আর শ্রাদ্ধ হতে ব্রাহ্মণ বাদ দিলে মতুয়া হয়ে গেলাম (মিন্টু বিশ্বাস ফুট কাটছে, প্রকৃত মতুয়া হয়ে গেলাম)। এটা কী মতুয়া দর্শন? বাওন বাদ দিলাম, বিয়ে করলাম, আর ঐ শ্রাদ্ধ করলাম বাওন ছাড়া – আমি বড়ো মতুয়া হয়ে গেলাম।”
Ø আমরা ভালো করেই জানি, মতুয়ারা শুধু নমশূদ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ সর্বজনীন, সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। মতুয়াদের মধ্যে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র-সহ চতুর্বর্ণের বাইরেরও বহু জনগোষ্ঠী রয়েছে। এটা আপাত ধারণা। কিন্তু মতুয়া আদর্শের মূলনীতি অনুসারে জাতিত্ব-বর্ণত্ব ত্যাগ না হলে মতুয়া হওয়া যায় কী? যদি কেউ মতুয়া হওয়ার পরে বলে যে, আমি ব্রাহ্মণ, কিংবা আমি শূদ্র, কিংবা আমি নমশূদ্র; অর্থাৎ মতুয়া হওয়ার পরেও যদি কারও মধ্যে পূর্বের জাতিত্ব-বর্ণত্ব থাকে, তবে নিশ্চিত জানুন যে, সে মতুয়া হতে পারেনি; জাতিত্ব-বর্ণত্ব ত্যাগ করে বা জলাঞ্জলি দিয়েই মতুয়া হতে হয়। যারা মতুয়াকে শুধু নমশূদ্রের বলে থাকেন তারা নিশ্চিত ভুল করছেন। মতুয়া হওয়ায় পরে কেউ আর ব্রাহ্মণ থাকেন না, শূদ্র থাকেন না, নমশূদ্র থাকেন না; মতুয়া হয়ে যান। মতুয়ার কোনও জাতিভেদ নাই-বর্ণভেদ নাই। যাদের উদাহরণ টেনেছেন, তারা মতুয়া হওয়ার পরে কখনও কি বলেছেন যে, তারা ব্রাহ্মণ। অক্ষয় চক্রবর্তী, রাধাক্ষ্যাপা চক্রবর্তী – এরা কী মতুয়া হওয়ার পরে কখনও বলেছেন যে, তারা এখনও ব্রাহ্মণ আছেন। ব্রাহ্মণের প্রকাশ চিহ্ন পৈতা ছিঁড়ে মতুয়া হয়েছেন, তারা আর ব্রাহ্মণ থাকেন কী করে?
Ø ৯০% মতুয়া ব্রাহ্মণ বাদ দিতে রাজী নয়; কথা সঠিক; তবে ভুল ধারণাবশত। ব্রাহ্মণ বাদ দিলে কেউ মতুয়া হয় না, ব্রাহ্মণ্যবাদ বাদ দিলে মতুয়া হওয়ার পথে এগিয়ে যায়। ব্রাহ্মণ্যবাদ বাদ দেওয়ার একটা অংশ বিভিন্নকর্মকাণ্ড হতে ব্রাহ্মণকে মুক্ত করা বা তাদের না-ডাকা। পূর্বেও বলেছি ব্রাহ্মণ্যকে পৌরহিত্য কাজে না-ডাকা মানে তাকে বাদ দেওয়া নয়। বিয়ে-শ্রাদ্ধ হতে ব্রাহ্মণ বাদ দিলে কেউ মতুয়া হয়ে যায় না, কিংবা প্রকৃত মতুয়া হয়ে যায় না; তবে এসব কাজ থেকে ব্রাহ্মণ বাদ দিয়ে মতুয়া হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যায়। নিজের কাজ যেদিন নিজে করবে, ব্রাহ্মণকে যেমন বাদ দিছে, অন্যদের ডাকাও যেদিন বাদ দিতে পারবে; সেদিন আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়ে যাবে। এটা নিয়ে এতো কটাক্ষ করার কিছু নাই; ফুট কাটা মিন্টুরও এতো ফুট কাটার দরকার নাই। আমরা জানি, এসব। তাছাড়া, কেউ এসব করে বড়ো মতুয়া বলে জাহিরও করে না। আপনারা যেমন, করেন।
৫। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “মতুয়া দর্শনটা আপনারা ভালো করে পড়ে জানবেন। হরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা, হরিলীলামৃত পড়বেন – তাতে তারক কী বলেছেন? হরিচাঁদ ঠাকুর বলেছেন, তোমরা (পাশ থেকে কেউ দ্বাদশ আজ্ঞার কথা বলে উঠেন) এই যে, দ্বাদশ আজ্ঞার কথা বলল – দ্বাদশ আজ্ঞাটা সঠিকভাবে পড়বেন। বলছে কী – কারো ধর্ম নিন্দা করো না; চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতিভেদ করো না। ---। হরিলীলামৃত বলছে কী – যে যাহারে ভক্তি করে, সে তার ঈশ্বর। কতবড়ো সার্বজনীন কথা! এর উপরে কোনও সার্বজনীন কথা হতে পারে না। --- বলে কী – যে যাহারে উদ্ধার করে, সে তার ঈশ্বর। এক সম্প্রদায়ের লোক বলতিছে এটা হরিলীলামৃতের কথা – যে বা যাহারে ভক্তি করে, সে তাহার ঈশ্বর। অথচ হরিলীলামৃত অপব্যাখ্যা করতিছে, আরও একটা সম্প্রদায়ের লোক। সে কারণে আমাদের সাবধান হতে হবে।”
Ø এটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন। মতুয়া দর্শনটা ভালো করে পড়ে জানবেন। হরিলীলামৃত, হরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা, হরিসঙ্গীত, মহাসংকীর্তন বা দ্বাদশ আজ্ঞা – প্রভৃতি গ্রন্থে যে সকল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেগুলো ভালো করে পড়ে, অনুধাবন করেই মতুয়া দর্শন জানতে হবে, বুঝতে হবে; তবে পড়াশুনার দায়িত্ব শুধু অপরকে দিলেই হবে না, আপনাদের নিজেদেরও সেগুলো পড়তে হবে, জানতে হবে। এসব গ্রন্থে গতানুগতিকের বাইরে এসে নতুন করে কী ধরনের নির্দেশাবলী দেওয়া হয়েছে; নতুন করে যা দেওয়া হয়েছে বা পূর্ব মতকে যেসব মত দ্বারা খণ্ডন করা হয়েছে, সেগুলোই মূলত মতুয়া দর্শনের নির্দেশ। চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতিভেদ করো না – চরিত্র পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ মতুয়া হতে পারে না, যার চরিত্র পবিত্র নয়, সে মতুয়া নয়। ফলে কেউ মতুয়া হলে, তার আর জাতিভেদ থাকে না, বর্ণভেদ থাকে না। জাতিভেদ-বর্ণভেদ কারও মনে যদি স্থান পায়, সে মতুয়া হওয়ার অযোগ্য; তারা প্রকৃত মতুয়া নয়। লীলামৃতের অপব্যাখ্যা দিয়ে, যে যাহারে ভক্তি করে সে তার ঈশ্বর; এই বাণীর অপব্যাখ্যা করে, আপনাদের অনুসারীরা আপনাদেরকে যে, ভগবানের আসনে বসিয়ে ফেলছে, তার দিকে নজর দেন না কেনো? ভক্তিযোগে কী আপনারাও ঈশ্বর হয়ে যাবেন। নিজেদেরকে কী ঈশ্বর ভাবা শুরু করেছেন? নিজেদেরকে ঈশ্বর বা ভগবান ভাবা থেকে বিরত ঠাকুর। ভক্তি ভালো, কিন্তু অতিভক্তি ভালো না। অতিভক্তি দাসত্বের লক্ষণ।
৬। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “আমরা ঐক্যতা চাই, কিন্তু ব্রাহ্মণ সমাজকে বাদ দিতে হয়, আপনারা ওড়াকান্দি যাইয়ে কোনও কামনা সাগরে স্নান করবেন না – ওটা একজন ব্রাহ্মণের কাটা – জগদীশ চক্রবর্তী।”
Ø কী অদ্ভুত এক দাবী করেছেন, তা হয়তো আপনি নিজেও বুঝতে পারেননি। শ্রীধাম ওড়াকান্দির কামনা সাগর গুরুচাঁদ ঠাকুর কোনও ব্রাহ্মণকে দিয়ে কাটান নাই; একজন একনিষ্ঠ মতুয়া জগদীশ চক্রবর্তীকে দিয়ে কাটিয়েছেন। হ্যাঁ, জগদীশ চক্রবর্তী মতুয়া হওয়ার আগে ব্রাহ্মণ ছিলেন, ব্রাহ্মণ বর্ণের ছিলেন; তিনি তার বর্ণত্ব ত্যাগ করেই মতুয়া হয়েছেন। এই সহজ সত্য উপলব্ধি করতে আপনাদের এতো কষ্ট কেন হয়? জগদীশ চক্রবর্তী মতুয়া হওয়ার পরেও কী ব্রাহ্মণ ছিলেন? যদি মতুয়া হওয়ার পরেও ব্রাহ্মণ থেকে থাকেন, তবে তিনি মতুয়াই হন নাই; আর তিনি মতুয়া না-হলে গুরুচাঁদ ঠাকুর তাকে দিয়ে কামনা সাগর কাটাতেন না। তাছাড়া, কামনা সাগর যদি কোনও ব্রাহ্মণে কেটেও থাকে, তবুও কামনা সাগর তার ব্যক্তিগত কিছু হয়ে যায় না যে, সেখানে মতুয়ারা স্নান করতে পারবে না। কামনা সাগর গুরুচাঁদ ঠাকুর কাটিয়েছিলেন, সে যাকে দিয়েই কাটান-না-কেনো, সকলের জন্যই কাটিয়েছিলেন; সুতরাং সেখানে স্নান করার অধিকার সকলের আছে, মতুয়ারও আছে। গুরুচাঁদ ঠাকুর কামনা সাগর জগদীশ গোঁসাইকে দিয়ে কাটিয়েছিলেন মানে এই নয় যে জগদীশ গোঁসাই কামনা সাগর কেটেছিলেন, গুরুচাঁদ ঠাকুর অনুমোদন না করলে কী জগদীশ গোঁসাই কামনা সাগর কাটতে পারতেন। বাড়িওয়ালা তার বাড়িতে কিছু করতে চাইলে অন্যকে দিয়ে করাতে পারেন, তাতে মালিকানা সত্ত্ব কাটনে-ওয়ালার হয়ে যায় না, বাড়ির মালিকেরই থাকে। কামনা সাগর যেই-ই কেটে থাকুক-না-কেনো, সেটা গুরুচাঁদ ঠাকুরের, আর গুরুচাঁদ মানেই সমগ্র মানব জাতির। সেখানে স্নান করতে কাউকে আপনারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিংবা রাগের বশেও নিষেধ করতে পারেন না।
৭। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “কিন্তু কোনও একটা বিভাগীয় শহরের, রাজধানী শহরের, জেলা শহরের মন্দিরকে যদি বলা হয় জাতীয় মন্দির, কেন্দ্রীয় মন্দির; তয় গুরুচাঁদ ঠাকুর মন্দির করে কী করল? --- তাই না! --- হারামজাদারাই বলে জাতীয় মন্দির অমুক জায়গা।”
Ø কোনও বিভাগীয় শহরের কিংবা রাজধানী শহরের মন্দির কেনো জাতীয় মন্দির হতে পারবে না; কেন্দ্রীয় মন্দির না হতে পারে, কিন্তু জাতীয় মন্দির হতে তো বাঁধা দেখি না। তাছাড়া, এখনও পর্যন্ত আপনারা, কিংবা মতুয়ারা তাদের কোনও মন্দিরকে জাতীয় মন্দির বলে ঘোষণা দিয়েছেন; দেননি। একটা মন্দির কখন জাতীয় মন্দির হয়ে ওঠে; জাতীয় মন্দির হওয়ার শর্তগুলো কী কী? জাতীয় মন্দির হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো মন্দিরটি সর্বজনীন হতে হবে। আর ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত মন্দির কখনও সর্বজনীন হতে পারে না; মতুয়ারা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস-নিষ্ঠা-শ্রদ্ধাসহ মান্যতা রেখে শ্রীধাম ওড়াকান্দির হরিচাঁদ মন্দির, গুরুচাঁদ মন্দির, কামনা সাগর-সহ বিভিন্ন স্থাপনাকে সর্বজনীন মনে করে, বিশ্বাস করে; অধিকাংশ মতুয়ারা জানেন না যে, ঐ মন্দিরের বা স্থাপনার জায়গাও সর্বজনীন নয়; ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ব্যক্তিগত সম্পত্তি আইনানুসারে সর্বজনীন নয়; আপনারা হয়তো বিভিন্ন স্বার্থবশে সেগুলো সর্বজনীনতার মোড়োকে আটকে রাখেন। শ্রীধাম ওড়াকান্দির মন্দিরকে সর্বজনীন করতে হলে আগে কোনও ট্রাস্ট বা সমিতি বা এমন কিছু গঠন করে সম্পূর্ণ মালিকানা সেই প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তর করা প্রয়োজন। সেটা আপনারা করবেন কী? যদি না করেন, তবে ওড়াকান্দির মন্দিরকে মানুষ আবেগে বললেও বাস্তবে সেটা সর্বজনীন হবে না, আর সর্বজনীন না-হলে তাকে জাতীয় বা কেন্দ্রীয় মন্দির বলাটাও ঠিক হবে না; উচিতও নয়। সে হিসেবে ঢাকার রমনায় অবস্থিত মন্দিরটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জায়গায় অধিষ্ঠিত নয়, এবং পরিচালিত হয় কমিটি গঠন দ্বারা; কোনও ব্যক্তি দ্বারা নয়। তাছাড়া, এই মন্দিরে মতুয়া সমাজের দল-মত-নির্বিশেষে সকলেই আসেন; ফলে সেটাকে জাতীয় মন্দির ভাবাই যেতে পারে। নিজেদের পায়ের নীচের মাটি সরে যাচ্ছে না-কি, এই দাবীর ফলে, যাতে এতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কটাক্ষ করছেন।
৮। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “ঠাকুরদের – বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে – বোঝেন? করো! করো করো! ঠাকুরগে সঙ্গে আন্দলন। কী করতে পারো তোমরা একটু দেখি? সে কারণে সাবধান হয়ে চলতি হবে। আমাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নাই। --- গুরুচাঁদ ঠাকুর স্টেট – গুরুচাঁদ ঠাকুরের একটা জমিদারি ছিল, ছোটমোটো – ‘গুরুচাঁদ ঠাকুর স্টেট’ নাম ছিল। এখনও আমরা ঠাকুর বাড়িতে প্রতিনিধি আছি আমরা ছয় ভাই, আমরা খুব দ্রুত বসে এক জায়গা, আমরা মতুয়াদের একটা নিয়মকানুন তৈরি করব, যাতে মতুয়ারা চলবে।”
Ø ঠাকুরদের বিরুদ্ধে কেউ আন্দোলন শুরু করেনি; করেছে ঠাকুরদের কর্তৃক করা ব্রাহ্মণ্যবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আপনারা ব্রাহ্মণ্যবাদী কর্মকাণ্ড পরিহার করুন, আমরা আপনাদের মাথায় তুলে রাখব। মতুয়া দর্শনের কথা বলবেন, আর গোরুর ল্যাজ ধরে স্বর্গে যেতে চাইবেন, মড়ার কাপড়-কাটা দড়ি দিয়ে ধড়া/ধ্বজা বেঁধে সাময়িক ব্রাহ্মণ হবেন, ব্রাহ্মণ-পুরোহিতকে স্বর্ণ-জমি দান করে বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করবেন; সেটা তো হতে পারে না। এগুলো পরিহার করুন, বিরোধিতা এমনিতেই চলে যাবে।
Ø আপনাদেরকে সাধুবাদ জানাই যে, আপনারা ঠাকুর বাড়ির ছয় প্রতিনিধি মিলে মতুয়াদের জন্য একটা নিয়মকানুন তৈরি করবেন। করুন। আমরাও সেটা দেখব; পড়ব; যদি আমরা দেখি যে, সেটা মতুয়া দর্শন বা মতুয়া আদর্শকে ক্ষুণ্ণ করেনি, মতুয়া আদর্শ অনুসারেই হয়েছে, তবে আমরাও তা মেনে নিব; মেনে চলার জন্য চেষ্টা করব। কিন্তু যদি দেখা যায়, আপনাদের করা কাজগুলোর মতো তৈরি করা নিয়মকানুনও মতুয়া আদর্শের বিরুদ্ধে, তবে এক মুহূর্ত বিলম্ব না-করেই আপনাদের তৈরিকৃত নিয়মকানুন প্রত্যাখ্যান করব। নিয়মকানুন মতুয়া আদর্শের পরিপন্থী হলে মতুয়ারা তা মেনে চলবে না; এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
৯। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, “১১ই মার্চ না হলে না-কি হরিচাঁদ ঠাকুরকে ইন্টারন্যাশনাল করা যায় না। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে – ইন্টারন্যাশনাল না, ইংরেজি কোনও তারিখ আছে তার জন্মদিন? আছে? হয় কী – ভাদ্রমাসের অষ্টমী। বুদ্ধ দেবের জন্মদিন হয় বুদ্ধ পূর্ণিমায় – ইন্টারন্যাশনাল না? বুদ্ধ পূর্ণিমাতে হচ্ছে। আরে! মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি। এরা বারুণীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। এরা ১৩ই মার্চ করে গুরুচাঁদ জয়ন্তী। গুরুচাঁদের আবির্ভাব হলো দোল পূর্ণিমায়।”
Ø ‘১১ই মার্চ না-হলে না-কি হরিচাঁদ ঠাকুরকে ইন্টারন্যাশনাল করা যায় না’ – এই দাবী যারা করছেন, তারা ভুল করছে; আবার যারা এই দাবীর যথার্থতা ভালোভাবে না বুঝে উলটাপালটা বলছেন, তারাও ভুল করছেন। বাড়ির গণ্ডি পার হলে গ্রামীণ হয়, গ্রামের গণ্ডি পার হলে এলাকার হয়, এলাকার গণ্ডি পার হলে দেশীয় হয়, জাতীয় হয়; আর দেশের গণ্ডি পার হলে আন্তর্জাতিক হয়। এখানে ১১ই মার্চ বা মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীর বিশেষ কোনও গুরুত্ব নেই। মতুয়ারা যেভাবে পালন করে সেটাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে পারবে, সেটাই বিষয়। কিছু কিছু জায়গায় শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব উৎসব শ্রীধাম ওড়াকান্দি থেকে বের করে প্রতিটি মতুয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। কয়জন মতুয়ার ঘরে হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাবের দিন বা গুরুচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাবের দিনে হরিচাঁদ বা গুরুচাঁদ পূজা হয়? খুব বেশি নয়। কয়টি গ্রামে সর্বজনীনভাবে হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব উৎসব একটা দিনেই অনুষ্ঠিত হয়; খুব বেশি না। আমরা এখনও এই উৎসবে ওড়াকান্দির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটা মতুয়ার ঘরেই পৌঁছে দিতে পারিনি; কীভাবে আন্তর্জাতিক দাবী করব?
Ø আমরা হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব দিবসে ছুটির দাবী করেছি, সেটাও উৎসবের দিনেই অর্থাৎ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে, ১১ই মার্চ নয়। হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব উৎসব ফাল্গুনী মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতেই হবে। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে ঠাকুরের আবির্ভাব দিবস হয়। ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের মিলনমেলা হয়। তবে ১১ই মার্চ হরিচাঁদ জয়ন্তী পালন করতে বাঁধা কোথায়? হরিচাঁদ জয়ন্তী আর হরিচাঁদ আবির্ভাব উৎসব এক রকম নয়। হরিচাঁদ জয়ন্তীতে হরিচাঁদ ঠাকুরের কর্তৃক করা বিভিন্ন সংস্কার কাজ, তার আন্দোলন, তার কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। ১৩ই মার্চ যদি গুরুচাঁদ ঠাকুর জয়ন্তী হয়, সেখানে গুরুচাঁদ ঠাকুরকে নিয়ে আলোচনা হয়, তবে ক্ষতি কার; বরঞ্চ সকলেরই লাভ। সেসব আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মতুয়া দর্শনকে বিশ্বের বুকে আরও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে যে যাই করুন, হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব উৎসবের বিরোধিতা করে কিছু করবেন না।
Ø কেউ ঠাকুর বাড়ি দখল করতে চাইছেন না; শ্রীধাম ওড়াকান্দির মন্দির-কামনা সাগর-সহ সকল স্থাপনাকে পারিবারিক গণ্ডি থেকে মুক্ত করে সর্বজনীন করতে চাইছে। যদি শ্রীধাম ওড়াকান্দি বলে কিছু থাকে, সেটা মতুয়াদের দখলেই আছে; মালিকানা যারই থাকুক-না-কেনো? তাই যা নিজেদের দখলে আছে, সেটা দখল করার জন্য আবার দখল করতে চাইবে কেনো? বরঞ্চ এই বিতর্ক অবসানের জন্য আপনারা নিজ উদ্যোগে সমগ্র মতুয়াদের ডাক দিন; সামগ্রিকভাবে একটি ট্রাস্ট গঠন করে সেই ট্রাস্টের অধীনে মালিকানা দিয়ে নির্ভার হন; শ্রীধাম ওড়াকান্দিকে, শ্রীধাম ওড়াকান্দির হরিচাঁদ মন্দির, গুরুচাঁদ মন্দির, কামনা সাগর-সহ ইত্যাদি স্থাপনাকে সর্বজনীন করতে সহায়তা করুন।
১০। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন “আপনারা রাজনীতিতে এগোয়ে আসেন এবং সেটা ওড়াকান্দির নেতৃত্বে – যেটা গুরুচাঁদ ঠাকুর বলে গেছেন। ওড়াকান্দির নেতৃত্ব ছাড়া যদি কেউ এগোন – কোনও কাজ হবে না।”
Ø ভালো আহ্বান জানিয়েছেন, ‘আপনারা রাজনীতিতে এগিয়ে আসেন’, কিন্তু লেজ ধরে রেখেছেন কেনো ‘সেটা ওড়াকান্দির নেতৃত্বে, সেটা গুরুচাঁদ ঠাকুর বলে গেছেন’? ওড়াকান্দির নেতৃত্বে বলতে কী বুঝিয়েছেন, সেটা বুঝতে পারি; আপনাদের অর্থাৎ বংশীয় ঠাকুরদের নেতৃত্বে। গুরুচাঁদ ঠাকুর কোথায় বলে গেছেন যে, যে ওড়াকান্দির নেতৃত্বে রাজনীতিতে আসতে হবে, কোথায় বলে গেছেন যে, ঠাকুর বংশীয়দের নেতৃত্বে রাজনীতিতে আসতে হবে। ওড়াকান্দির নেতৃত্ব ছাড়া এগোলে কোনও কাজ হবে না, সেটাই বা কোথায় বলে গেছেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। আপনারা নিজেরাই তো এখনও ঠিকমত নেতৃত্ব দিতে পারেন না, আপনাদের নেতৃত্বে কেনো যাবে। সাধারণ মতুয়াদের ঢাল বানিয়ে চলার প্রয়াস বাদ দেন, মানুষের উন্নতির জন্য রাজনীতি করেন, মতুয়ার উন্নতির জন্য রাজনীতি করেন। নেতৃত্ব চাইতে হবে না, এমনিতেই দিয়ে দিবে। জোর করে কর্তৃত্ব ধরে রাখা যায় না।
১১। শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন “বিয়ে, শ্রাদ্ধ – যা মতে যে করবেন, তাতে আমার কোনও আপত্তি নাই; কিন্তু কিন্তু সমাজের, গ্রামের ঐক্যতা আনতে হবে। আমি গ্রামের থেকে একটা লোক একটা কাজ করলাম, গ্রামের থেকে একঘরে হয়ে গেলাম – তাতে লাভ হলো, না আমাগে লোকসান হলো? লোকসান হলো না? আমরা যাই করব, আমরা যেনো একতাবদ্ধ হয়ে করতে পারি। আমার পাশে যেনো জনগণ থাকে। অতএব, এইভাবে আপনারা চলেন।”
Ø শুনেছি গুরুচাঁদ ঠাকুর ১২/১৩ বছর একঘরে ছিলেন। তারই উত্তরাধিকারীগণ আপনারা একঘরে হওয়ার ভয়ে আদর্শ বিচ্যুত হয়েও একঘরে হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে বলেন। ভাবতেও অবাক লাগে। মতুয়ারা তাদের আদর্শে কাজ করবে, তাতে গ্রামের ঐক্য নষ্ট হলেও। প্রয়োজনে মতুয়ারা নতুন সমাজ গঠন করবে, নতুন ঐক্য গঠন করবে। গ্রামের ঐক্য রক্ষার জন্য আদর্শ বিচ্যুত হতে বলবেন না, বরঞ্চ তাদেরকে আদর্শ মেনে চলার নির্দেশ দিন এবং কেউ যেনো তাদের উপর অত্যাচার করতে না-পারে, তার জন্য পদক্ষেপ নিন, তাদের পাশে দাঁড়ান।
মানুষ জন্মালে যেমন মৃত্যু অবধারিত, তেমনই মানুষ মাত্রই ভুলের অধীন। আমার ভুল হওয়াটাও তাই স্বাভাবিক। যদি ভুল কিছু চোখে ধরা পড়ে, তবে শুধরে দিতে ভুলবেন না।
বৃন্দাবন সৌক্ষ্ম্য
সততা যুবসংঘ, রাহুথড় কর্তৃক আয়োজিত ২৪তম বাৎসরিক মহোৎসব ও মতুয়া দর্শন সম্পর্কে আলোচনা সভায় গত ২১/০৩/২০২৪ খ্রি. তারিখে ওড়াকান্দির ঠাকুর পরিবারের প্রতিনিধি শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর কর্তৃক প্রদত্ত মূল বক্তব্যের লিখিতরূপ (ভিডিও থেকে লেখা, অনেক স্থানে বুঝা যায়নি, সেখানে ‘---’ রাখা হয়েছে।):
--- --- --- সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম। আমরা কথায় কথায় বলি মতুয়া ধর্ম; মতুয়া মতে শ্রাদ্ধ, মতুয়া মতে বিবাহ, ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো কিন্তু ঠিক না। আর আপনারা তো জানেন, আমার অসিত বাবু (?) বলে গেছেন, আমরাও বলি বিবাহ-শ্রাদ্ধ – এ একটা সামাজিক ব্যাপার; এতে ধর্ম টেনে আনবেন না। সমাজের রীতিনীতি এটা। কেউ ইচ্ছা করলে লাগাবে, কেউ ইচ্ছা করলে লাগাবে না। যদি সমাজে বসবাস করে সবাই একমত পোষণ করে কোনোকিছু করেন আপনারা, করবেন। যেমন: যেকোনো কালীবাড়ি, যেকোনো হরিবাড়ি, যেকোনো রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে যুবক-যুবতী যাইয়ে সিন্দুর পরায়ে বিয়ে করে আসে। এটাও তো ---(শব্দটা বুঝা যাচ্ছে না) ধর্ম মতে বিবাহ। বিবাহ তো দশ প্রকার, আপনারা জানেন; তাই না? কেউ যদি ওড়াকান্দি যাইয়ে ঠাকুরকে সাক্ষী রেখে আচার মালা দিয়ে প্রাথমিকভাবে বিয়া করে, আবার বাড়ি গিয়ে সামাজিকভাবে বিয়া করে। যুগ তাই। যারা হরিচাঁদ ঠাকুরকে মান্য করে তারা তার সামনে আবদ্ধ হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য তো আমাদের কোনও বিতর্কের ই(কারণ) নেই।
আর কথা হচ্ছে, যেটা, ঠাকুর কিন্তু মতুয়া সমাজ তৈরি করেছে – পাঁচ গ্রাম নিয়ে। এখন আবার ঐ পাঁচ গ্রাম থেকে ওরা সাত গ্রাম না আট গ্রাম অন্তর্গত হইছে মতুয়া সমাজে। তারা কিন্তু মতুয়া মতে সবকিছু করে। এবং যারা যারা খরচ বলি – স্বজাতি ভোজন; মতুয়া মতে যেগুলো করা হয় – সেখানে কিন্তু নিরামিষ রান্না হয়, আমিষ দেয়া হয় না; মহোৎসব হয়। ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িও সেই ---। গুরুচাঁদ ঠাকুর-সত্যভামা মা থেকে অদ্য-অবধি ঠাকুর বাড়ি যত মহোৎসব হয়েছে ঠাকুরগুলো দেহ রাখার পরে, আজ পর্যন্ত কোনও মাছ-মাংস দেয়া হয়নি। অর্থাৎ বৈষ্ণব-আচারে যে প্রসাদ, নিরামিষ প্রসাদ দেওয়া হয়। এ কারণে এটা নিয়ে বিতর্ক করবেন না আপনারা।
আমার কথা, আর একটা জিনিস জানতে হবে, মতুয়ারা শুধু নমশূদ্রের মধ্যে আবদ্ধ না। আজকে নড়াইল জেলার কথা চিন্তা করেন, শতকরা ৭৫ ভাগ লোক হচ্ছে পাল সম্প্রদায়ের লোক, সাহা, কুণ্ডু, বণিক, শীল সম্প্রদায়ের লোক, কায়স্থ, ব্রাহ্মণ লক্ষ লক্ষ হাজার হাজার নাম – এরা মতুয়া। হরিচাঁদ ঠাকুরের আমল থেকে এই পালেরা সবাই মতুয়া। হরিপালের নাম শুনছেন আপনারা, নড়াইলের। এখনও শতকরা ৯০ জন মতুয়া, তারা ব্রাহ্মণ বাদ দিতে রাজী না। আমরা নমশূদ্রদের ভিতরেও মাত্র মুষ্টিমেয় কয়েকজন। এরা মনে করেছে কী – বিয়ে আর শ্রাদ্ধ হতে ব্রাহ্মণ বাদ দিলে মতুয়া হয়ে গেলাম (মিন্টু বিশ্বাস ফুট কাটছে, প্রকৃত মতুয়া হয়ে গেলাম)। এটা কী মতুয়া দর্শন? বাওন বাদ দিলাম, বিয়ে করলাম, আর ঐ শ্রাদ্ধ করলাম বাওন ছাড়া – আমি বড়ো মতুয়া হয়ে গেলাম।
মতুয়া দর্শনটা আপনারা ভালো করে পড়ে জানবেন। হরি-গুরুচাঁদ চরিত্র সুধা, হরিলীলামৃত পড়বেন – তাতে তারক কী বলেছেন? হরিচাঁদ ঠাকুর বলেছেন, তোমরা (পাশ থেকে কেউ দ্বাদশ আজ্ঞার কথা বলে উঠেন) এই যে, দ্বাদশ আজ্ঞার কথা বলল – দ্বাদশ আজ্ঞাটা সঠিকভাবে পড়বেন। বলছে কী – কারো ধর্ম নিন্দা করো না; চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতিভেদ করো না। ---। হরিলীলামৃত বলছে কী – যে যাহারে ভক্তি করে, সে তার ঈশ্বর। কতবড়ো সার্বজনীন কথা! এর উপরে কোনও সার্বজনীন কথা হতে পারে না। --- বলে কী – যে যাহারে উদ্ধার করে, সে তার ঈশ্বর। এক সম্প্রদায়ের লোক বলতিছে এটা হরিলীলামৃতের কথা – যে বা যাহারে ভক্তি করে, সে তাহার ঈশ্বর। অথচ হরিলীলামৃত অপব্যাখ্যা করতিছে, আরও একটা সম্প্রদায়ের লোক। সে কারণে আমাদের সাবধান হতে হবে।
আমরা ঐক্যতা চাই, কিন্তু ব্রাহ্মণ সমাজকে বাদ দিতে হয়, আপনারা ওড়াকান্দি যাইয়ে কোনও কামনা সাগরে স্নান করবেন না – ওটা একজন ব্রাহ্মণের কাটা – জগদীশ চক্রবর্তী। হরিচাঁদ ঠাকুরের সময়ে --- বড়ো একজন ভক্ত ছিল চক্রবর্তী; হরিচাঁদ ঠাকুরের সময় --- চক্রবর্তী ছিল কালিয়ায় বাড়ি, রাধাচরণ চক্রবর্তী যাকে রাধাক্ষ্যাপা বলা হতো। কত কত কায়স্থ, ব্রাহ্মণ ছিল ঠাকুরের ভক্ত। তা এই সম্প্রদায়কে বাদ দেবেন, আপনারা?। এক নমশূদ্রের সম্পদ হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর?
আর ইদানীং অনেক মন্দির হইছে, বিভাগীয় শহরে-রাজধানী শহরে – আমরা সাধুবাদ জানাই, আরও মন্দির হোক। কিন্তু কোনও একটা বিভাগীয় শহরের, রাজধানী শহরের, জেলা শহরের মন্দিরকে যদি বলা হয় জাতীয় মন্দির, কেন্দ্রীয় মন্দির; তয় গুরুচাঁদ ঠাকুর মন্দির করে কী করল? --- তাই না! --- হারামজাদারাই বলে জাতীয় মন্দির অমুক জায়গা। সে কারণে আমরা সাবধান করে দিতে চাই। বাড়া বাড়া বেশি বাড়া ভালো না।
ঠাকুরদের – বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে – বোঝেন? করো! করো করো! ঠাকুরগে সঙ্গে আন্দলন। কী করতে পারো তোমরা একটু দেখি? সে কারণে সাবধান হয়ে চলতি হবে। আমাদের মধ্যে কোনও বিভাজন নাই। --- গুরুচাঁদ ঠাকুর স্টেট – গুরুচাঁদ ঠাকুরের একটা জমিদারি ছিল, ছোটমোটো – ‘গুরুচাঁদ ঠাকুর স্টেট’ নাম ছিল। এখনও আমরা ঠাকুর বাড়িতে প্রতিনিধি আছি আমরা ছয় ভাই, আমরা খুব দ্রুত বসে এক জায়গা, আমরা মতুয়াদের একটা নিয়মকানুন যাতে মতুয়ারা চলবে।
১১ই মার্চ না হলে নাকি হরিচাঁদ ঠাকুরকে ইন্টারন্যাশনাল করা যায় না। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনে – ইন্টারন্যাশনাল না, ইংরেজি কোনও তারিখ আছে তার জন্মদিন? আছে? হয় কী – ভাদ্রমাসের অষ্টমী। বুদ্ধ দেবের জন্মদিন হয় বুদ্ধ পূর্ণিমায় – ইন্টারন্যাশনাল না? বুদ্ধ পূর্ণিমাতে হচ্ছে। আরে! মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি। এরা বারুণীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। এরা ১৩ই মার্চ করে গুরুচাঁদ জয়ন্তী। গুরুচাঁদের আবির্ভাব হলো দোল পূর্ণিমায়। অতএব, সাবধান হতে হবে আপনাদের। অতি সাবধান। এই বাঁদরামি আমরা সহ্য করব না, যে যত বড়ো নেতা হও। আমরা এখনও আছি ঠাকুর বাড়ি – এখন ঠাকুররা; এখন তিনবেলা করে ভগবানরে ডাকে ঠাকুররা মরে গেলে ঐ ওড়াকান্দি দখল করব আমরা। এমন কিছু লোক আছে। অতএব আপনারা একতাবদ্ধ হবেন – গুরুচাঁদ ঠাকুরের কথা – যাদের দল নেই, তাদের বল নেই; দল আছে দলাদলি না। দল হচ্ছে একতাবদ্ধ হওয়া। আর বলছে কী? যে ধর্মে রাজা নাই, সে ধর্ম তাজা নাই। অর্থাৎ যে ধর্মে – দুর্ভাগা হিন্দুদের পৃথিবীতে হিন্দুদের কোনও রাষ্ট্র নাই, হিন্দু কোনও রাজা নেই। এই কারণে ঐ রাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব পাওয়ার জন্যি আমাদের এগোয় আসতে হবে। আমাদের সুব্রত ঠাকুর – আমাদের একটা প্রতিনিধি। আগামীতে আরও বড়ো প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা ঠাকুরের ধারে এই প্রার্থনা করি। সে কারণে আপনারা, আপনারা রাজনীতিতে এগোয়ে আসেন এবং সেটা ওড়াকান্দির নেতৃত্বে – যেটা গুরুচাঁদ ঠাকুর বলে গেছেন। ওড়াকান্দির নেতৃত্ব ছাড়া যদি কেউ এগোন – কোনও কাজ হবে না। যে যত বড়ো নেতা হন, সেই পর্যায়ে নেতা যান নাই। ঠাকুরগে গুষ্ঠি উদ্ধার করতিছেন, আরেকটু চেষ্টা করেন। কত কী করতি পারেন – দেখব, ঠাকুরদের বিরুদ্ধে; আমরা আহ্বান জানায় যাই, যত পারেন আপনারা করেন।
যা হোক, আজকে --- সকলকে বলব, গুরুচাঁদ ঠাকুর চেয়েছিল, যুবকরা এগিয়ে আসুক – আপনারা এগিয়ে আসছেন – আর এই হলো গুরুচাঁদ ঠাকুরের মূল দর্শন, হরিচাঁদ ঠাকুরের মূল দর্শন।
আর এইগুলো সামান্য ব্যাপার। বিয়ে, শ্রাদ্ধ – যা মতে যে করবেন, তাতে আমার কোনও আপত্তি নাই; কিন্তু কিন্তু সমাজের, গ্রামের ঐক্যতা আনতে হবে। আমি গ্রামের থেকে একটা লোক একটা কাজ করলাম, গ্রামের থেকে একঘরে হয়ে গেলাম – তাতে লাভ হলো, না আমাগে লোকসান হলো? লোকসান হলো না? আমরা যাই করব, আমরা যেনো একতাবদ্ধ হয়ে করতে পারি। আমার পাশে যেনো জনগণ থাকে। অতএব, এইভাবে আপনারা চলেন।
ওড়াকান্দি আসবেন, ওড়াকান্দিতে এসে, মহাবারুণীতে এসে ঐ জলে ডুবোয়ে পুণ্য অর্জন করবেন না। হরিনামের গোলা, অর্থাৎ কীর্তনখোলায় যাইয়ে যখন হরিনাম কীর্তন করবেন, মাটিতি গড়ায় পড়ে যাবেন, তখনই আপনাদের মহাবারুণীতে যাওয়া হবে। অতএব, ওড়াকান্দি যাবেন আপনারা। ওড়াকান্দি যাতি হবে; যখন আপনি হরিনাম কীর্তন করবেন, মাটিতে গড়াগড়ি যাবেন, তখনই ঐ ওড়াকান্দি যাওয়া হবে। এই মহোৎসবটা ধরে রাখবেন, প্রতিবছর। হরি ধ্যান, হরি জ্ঞান, হরিনাম সার; নামে-প্রেমে মাতোয়ারা, মতুয়া নাম তার। আমরা নামে-প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে যেনো মতুয়া হতে পারি, এই কথা বলে, সবাইকে আমার প্রণাম জানিয়ে, আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজকবৃন্দ, যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন, সবাইকে প্রণাম করি।
--- শ্রীমান পদ্মনাভ ঠাকুর, ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি।