নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
লঘু-ত্রিপদী
কুবের বৈরাগী, মহা অনুরাগী,
তার বাড়ী একদিনে।
ভিক্ষার লাগিয়া, তার বাড়ী গিয়া,
ভিক্ষা মাগিল যখনে।।
গোস্বামীর টের, পাইয়া কুবের,
ধরে গোস্বামীর পদ।
অদ্য এ বাড়ীতে, হবে সেবা নিতে,
দিতে হইবে শ্রীপদ।।
দয়া উপজিল, গোস্বামী বলিল,
বলে শীঘ্র দেও খেতে।
কুবের রমণী, গৃহে নাই তিনি,
গিয়াছেন বস্ত্র ধুতে।।
ত্বরান্বিত হ’য়ে, কুবের আসিয়ে,
বলে তাহার নারীকে।
এস শীঘ্রগতি, এসেছে অতিথি,
সেবা করা’ব তাহাকে।।
কুবের রমণী, কহিছেন বাণী,
অতিথি এসেছে কে।
কুবের কহেন, লোচন এলেন,
সেবা করা’ব তাহাকে।।
কুবের রমণী, রুষিয়া অমনি,
কহিছে রাগের সাথ।
টুণ্ড মহারুগে, দূর করে দিগে,
কে রাঁধিবে তার ভাত।।
কুবের রুষিয়া, বাটীতে আসিয়া,
নিজে যায় পাক ঘরে।
করে আয়োজন, লোচন তখন,
তাহা জানিল অন্তরে।।
গোস্বামী লোচন, মধুর বচন,
ডেকে কহে কুবেরেরে।।
যার যেই কাজ, তার সেই সাজ,
অন্যে কি সাজিতে পারে।।
বল গিয়ে মায়, আমি টুণ্ড নয়,
পাক করুণ আসিয়ে।
ভাল হ’য়ে এলে, ভাল পাক হ’লে,
আমি খাব ভাল হ’য়ে।।
কুবের নারীকে, কহিছেন সুখে,
পাক কর শীঘ্র গিয়ে।
মোরে পাঠালেন, স্বামী বলিলেন,
খাইবেন ভাল হ’য়ে।।
কুবের রমণী, কহিছেন বাণী,
এই কথা নহে সাচা।
উহা না মানিব, আমি না যাইব,
ছাড়িয়া কাপড় কাঁচা।।
কহিছেন রাগী, কি কহিলি মাগী,
কুবের ক্রোধেতে পূর্ণ।
গোঁসাই লোচন, কহিছে বচন,
এ রাগ কিসের জন্য।।
বাছারে কুবের, কপালের ফের,
মাকে কেন মন্দ বল।
ক্রোধ নহে ভাল, তুমি আমি ভাল,
মাতাও কহিছে ভাল।।
চলহ এখন, আমরা দু’জন,
পাক আয়োজন করি।
মা আসিবে পরে, পাক করিবারে,
আমরা কি কাজে হারি।।
গোস্বামী আসিয়ে, কুবেরকে ল’য়ে,
রাখিয়ে নিজের ঘরে।
যাইয়া গোঁসাই, সে নারীর ঠাই,
কহিছেন মৃদু স্বরে।।
মা এস এখন, করহ রন্ধন,
ভোজন করিব আমি।
সুপুরুষ হ’য়ে, খাইব বসিয়ে,
দেখিতে পাইবা তুমি।।
তাহা শুনি সতী, অতি শীঘ্র গতি,
ভকতি করিল মনে।
অন্নাদি ব্যঞ্জন, করিল রন্ধন,
লোচন বসি ভোজনে।।
দেখিবারে পায়, শ্যাম নীলকায়,
তাহাতে উঠেছে জ্যোতি।
অধর শ্রীমন্ত, শশী শোভাবন্ত,
দন্ত মুকুতার পাঁতি।।
হস্ত পদাঙ্গুল, অতুল রাতুল,
জবা ফুল শোভা করে।
কি অতুল পদ, যেন কোকনদ,
চন্দ্র পতিত নখরে।।
সে রূপ দেখিয়ে, পড়ে লোটাইয়ে,
দিব্য জ্ঞান পেয়ে কয়।
ডেকেছে কুবেরে, তোমারে শিবিরে,
শিবের ধন উদয়।।
কুবের দেখিয়া, পড়িল ঢলিয়া,
তাহার নারীর পায়।
চেতন পাইয়া, কহিছে কাঁদিয়া,
আমার মস্তকে আয়।।
তুই নারী ধন্যে, এ রূপের জন্যে,
করেছিলি এ ছলনা।
তোর স্পর্শ জন্য, মোর দেহ ধন্য,
সব শূন্য তোমা বিনা।।
কুবের গৃহিণী, যেমন যক্ষিণী,
তেমনি মানি তোমারে।
ভবানীর শোভা, পদে দিয়ে জবা,
দেখাইল কুবেরেরে।।
অদ্য তোর গুণে, আমার ভবনে,
দেখিতে পাইনু তাই।
এই বাঞ্ছা করি, তোমা হেন নারী,
জনমে জনমে পাই।।
দেখিতে দেখিতে, ক্ষণেক পরেতে,
সেই রূপ লুকাইল।
হরিষে বিরসে, গললগ্নী বাসে,
কুবের পদে পড়িল।।
ধরিয়া লোচন, করি আলিঙ্গন,
কহিলেন কুবেরেরে।
যা দেখ নয়নে, তোমাদের গুণে,
যার কাজ সেই করে।।
ধন্য সে কুবের, ধন্যে এ ভবের,
লোচনের পদ সেবি।
শ্রবণে মঙ্গল, হরি হরি বল,
রচিল তারক কবি।।