নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
পয়ার
এবে শুন ঠাকুরের জন্ম বিবরণ।
যেই রূপে প্রভু ভবে অবতীর্ণ হন।।
পূর্বেতে কড়ার ছিল ভক্তগণ সঙ্গে।
উৎকলেতে দৈববানী ছিল যে প্রসঙ্গে।।
আর এক বাক্য ছিল শূন্যবাণী সনে।
শেষ লীলা করিব আমি ঐশণ্য কোণে।।
নীচ হয়ে করিব যে নীচের উদ্ধার।
অতি নিন্মে না নামিলে কিসে অবতার।।
কৃষ্ণ প্রেম সুনির্মল উচ্চেতে না র’বে।
নিম্ন খাদে থাকে বারি দেখ মনে ভেবে।।
নীচ জন উচ্চ হ’বে বুদ্ধ তপস্যায়।
বুদ্ধদেব অবতার যে সময় হয়।।
বুদ্ধের কামনা তাহা পরিপূর্ণ জন্য।
যশোমন্ত গৃহে হরি হৈল অবতীর্ণ।।
বুদ্ধদেব বহুদিন তপস্যা করিল।
তাতে ব্রহ্ম প্রণবাদি শূদ্রেতে পাইল।।
নীচ জন প্রতি দয়া বুদ্ধদেব করে।
প্রণবেতে অধিকারী শূদ্র তার পরে।।
বুদ্ধদেব তপস্যাতে হইয়া সদয়।
বরং গৃহ্নু বলে প্রভু বর দিতে চায়।।
বুদ্ধ বলে বর যদি দিবে মহাশয়।
অগ্রভাগে কর প্রভূ শূদ্রের উপায়।।
প্রভু বলে তব নামে অবতার হ’ব।
প্রণব ত্রিগুণ নাম শূদ্রেরে বিলা’ব।।
এক হরিনাম মধ্যে গুণ দিয়া সব।
নীচজনে করাইব পরম বৈষ্ণব।।
বুদ্ধ বলে যদি প্রভু হও অবতার।
এ দেশে থাকেনা যেন জাতির বিচার।।
আর এক প্রশ্ন তার মধ্যেতে উদয়।
সংক্ষেপে বলিব যাতে পুথি না বাড়য়।।
কুবের নামেতে জোলা জাতি সে যবন।
পরম বৈষ্ণব রাম মন্ত্রে উপাসন।
তাহার নন্দন হ’ল নামেতে নকিম।
নিরবধি কৃষ্ণপ্রেম যাহার অসীম।।
কুবের আরোপে থেকে কৃষ্ণরূপ দেখে।
নকিম বুনায় তাঁত হরি বলে মুখে।।
কুবের আরোপে গাঁথে কুসুমের হার।
গলে দিবে সাজাইবে শ্যাম নটবর।।
ভক্তিফুলে মনোসূতে হার গাঁথি নিল।
সেই মালা ত্রিভঙ্গের গলে তুলে দিল।।
চূড়ায় ঠেকিয়া হার নাহি পড়ে গলে।
দিতে হার পুনর্বার চূড়ায় ঠেকিলে।।
নকিম আরোপে তাঁত বুনা’য়েছে হাতে।
মুখে হরি বলে কৃষ্ণ দেখে আরোপেতে।।
বাপের আরোপ দেখি নকীমের সুখ।
বলে হাত আরো কিছু উপরে উঠুক।।
দেখহ জোলার এই প্রেমভক্তি গুণ।
কি করে তাহার কাছে স্বত্ত্বঃ রজঃ গুণ।।
দারু ব্রহ্ম অবতার হ’ল যে সময়।
কুবেরের কীর্তি রাখিলেন এ ধরায়।।
কুবেরের তোড়ানী খাইবে যেইজন।
তার হ’বে দারু ব্রহ্ম রূপ দরশন।।
আর এক প্রস্তাব যে আসিল তাহাতে।
একদা নারদ মুনি গেল বৈকুন্ঠেতে।।
বিষ্ণুর প্রসাদ মুনি খাইল তথায়।
কৈলাসেতে আসি মুনি হইল উদয়।।
শিবেরে বলেন মুনি হরষিত মন।
অদ্য হৈনু শ্রীনাথের প্রসাদ ভাজন।।
শিব বলে আমারে ত দিলে না কিঞ্চিৎ।
প্রভুর প্রসাদে মোরে করিলে বঞ্চিৎ।।
নারদের নখাগ্রে প্রসাদ কণা ছিল।
প্রেমভরে হরের বদনে তুলে দিল।।
প্রেমে মত্ত হইলেন নারদ শঙ্কর।
বঞ্চিতা হইয়া গৌরী করে আঙ্গীকার।।
আমি যদি সাধ্বী নারী হই তব ঘরে।
এ প্রসাদ বিলাইব বাজারে বাজারে।।
তপস্যা করিল হরি বর দিতে এল।
প্রসাদ বাজারে বিকি বর চেয়ে নিল।।
শ্লোক
কমলা রন্ধনাযুক্তা ভোজনে চ জনার্দ্দনঃ।
কুক্কুরেণ মুখাদ্ভ্রষ্টা দেবানাং দুর্ল্লভামপি।।
পয়ার
বুদ্ধদেব বাসনা হইয়া গেল পূর্ণ।
ঘরে ঘরে নীচ শূদ্র সবে হ’ল ধন্য।।
এই মত দেখ নানা কারণ বশতঃ।
গোলক বিহারী হ’ল যশোমন্ত সূত।।
অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী ছিলেন শয়নে।
কৃষ্ণ দাস পুত্র কোলে আনন্দিত মনে।।
রাম-কৃষ্ণ মুখে বলে কোলে কৃষ্ণদাস।
প্রভুর অগ্রজ যিনি ভুবনে প্রকাশ।।
দ্বাপরেতে সংকর্ষণ যিনি বলরাম।
আপনি অনন্ত শক্তি সুন্দর সুঠাম।।
সেই অংশে বিশ্বরূপ গৌরাঙ্গ লীলায়।
শচী গর্ভে জনমিল এসে নদিয়ায়।।
গৃহত্যাগী অনুরাগী সন্নাসী হইল।
পুত্র শোকে শচীমাতা কাঁদিয়া ফিরিল।।
যদ্যপিও বিষ্ণু অংশে স্বয়ং অবতার।
কেহ না শোধিতে পারে মাতৃ ঋণ ধার।।
যখন গৌরাঙ্গ গেল মাকে তেয়াগিয়া।
কড়ার দিলেন জন্ম লইব আসিয়া।।
কিছু না বলিয়া বিশ্বরূপ উদাসীন।
তার জন্য শচীমাতা কাঁদে রাত্রি দিন।।
সে কারণ মাতৃসেবা অপরাধ ছিল।
সেই ঋণ শোধিবারে জনম লভিল।।
স্বয়ং এর অবতার হয় যেইকালে।
আর আর অবতার তাতে এসে মিলে।।
যিনি ছিল বিশ্বরূপ গৌরাঙ্গ লীলায়।
তিনি কৃষ্ণদাস যশোমন্ত পুত্র হয়।।
একমাত্র পুত্র নববর্ষ কৃষ্ণদাস।
এক পুত্রে সুখী মাতা নাহি অন্য আশ।।
এ হেন সময় প্রভুর মনে হ’ল আশ।
অন্নপূর্ণা গর্ভ সিন্ধু ইন্দু পরকাশ।।
নানারূপ বিভীষিকা দেখে অন্নপূর্ণা।
শচীমাতা নিদ্রাযুক্তা নহে অচৈতন্যা।।
জাগরিতা যেন কিছু নিদ্রার আবেশ।
দেখে যেন জয়ধ্বনি হয় সর্ব দেশ।।
যশোমন্ত বলে প্রিয়া শুনহ বচন।
যে রূপ আমার মনে জাগে সর্বক্ষণ।।
নবীন মেঘের বর্ণ বনমালা গলে।
ভৃগুপদ চিহ্ন দেখা যায় বক্ষঃস্থলে।।
পিতাম্বর ধর কোকনদ পদাম্বুজে।
শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম শোভে চতুর্ভুজে।।
এই রূপ আভা মম হৃদয় পশিয়া।
সে যে তব কোলে বৈসে দ্বিভুজ হইয়া।।
ঠাকুরাণী বলে নাথ নিশার স্বপন।
নিশাকালে প্রকাশ না করে বুধজন।।
কৃষ্ণময় চিত্ত তব কৃষ্ণ প্রতি আর্তি।
শয়নে স্বপনে দেখ ঈশ্বর শ্রীমূর্তি।।
ঠাকুর বলেন প্রিয়া নহেত যামিনী।
উদয় হইল দীপ্তকর দিনমণি।।
ঠাকুরাণী বলে এত বাতুল লক্ষণ।
কিম্বা দানবের কার্য না বুঝি কারণ।।
ঠাকুর বলেন যদি বাতুল লক্ষণ।
তবে কেন দেখিলাম মুরলী বদন।।
ঠাকুরাণী বলে তবে জ্যোতির্ময় রূপ।
সে রূপ দেখিয়া ভাব দিবার স্বরূপ।।
শতসূর্য সম রশ্মি বায়ুতে মিশিল।
অন্নপূর্ণা গর্ভে আসি প্রবেশ করিল।।
এ হেন প্রকারে মাতা হৈল গর্ভবতী।
ঈশ্বর ইচ্ছায় হৈল বায়ুগর্ভে স্থিতি।।
শুভগ্রহ নক্ষত্র শুভ লগ্ন হইল।
মাহেন্দ্র সুযোগে পুত্র প্রসব করিল।।
বারশ আঠার সাল শ্রীমহাবারুণী।
কৃষ্ণ পক্ষে ত্রয়োদশী তিথি সে ফাল্গুণী।।
হরিসাল বলি সাল ভক্তগণে গণে।
নাহিক বৈদিক ক্রিয়া শ্রীবারুণী বিনে।।
ধন্য অন্নপূর্ণা হেন পুত্র পেল কোলে।
দ্বাপরে যশোদা যিনি ছিলেন গোকুলে।।
দ্বাপরে ছিলেন নন্দ যশোদার কান্ত।
যশোমতি কান্ত এবে হ’ল যশোমন্ত।।
ধরা দ্রোণ দুইজন তস্য পূর্বে ছিল।
নন্দ যশোমতি তেই দ্বাপরে হইল।।
কলিকালে জগন্নাথ মিশ্র শচীরাণী।
এবে যশোমন্ত অন্নপূর্ণা ঠাকুরাণী।।
ধন্য রামকান্ত সাধু ধন্য এ জগতে।
প্রভু আসি জনমিল যাহার বরেতে।।
প্রভুর জনমখন্ড সুধা হ’তে সুধা।
কহিছে রসনা খেলে খণ্ডে ভব ক্ষুধা।।