নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
পয়ার
মল্লকাঁদি গ্রাম্য জমি হ’য়ে গেল জলা।
উর্বরা যতেক জমি হইল অফলা।।
গ্রাম মাঝে কৃষি কার্য করিত যাহারা।
নানারূপ বাণিজ্যাদি করিল তাহারা।।
হরিচাঁদ বলে শুন ওরে মৃত্যুঞ্জয়।
এ দেশে অজন্মা হ’ল কি হবে উপায়।।
সকলে বাণিজ্য করি হইল ব্যাপারী।
তুমিত বেড়াও শুধু বলে হরি হরি।।
জননী তোমার হয় পরমা বৈষ্ণবী।
কিসে হবে মাতৃ সেবা মনে মনে ভাবি।।
গৃহস্থের গৃহধর্ম রক্ষা সুবিহিত।
কর্মক্ষেত্র গৃহকার্য করাই উচিত।।
ভার্যা তব সাধ্বী সতী অতি পতিব্রতা।
কার্য কিছু না করিলে খেতে পাবে কোথা।।
তুমি যাও মধুমতি নদীর ওপার।
দিন কত থাক গিয়া বাছারে আমার।।
থাকগে চণ্ডীচরণ মল্লিকের বাড়ী।
জমি রাখ ধান্য পাবে কৃষি কার্য করি।।
মম অন্তরঙ্গ ভক্ত হবে সে দেশেতে।
তোমারে করিবে ভক্তি একাগ্র মনেতে।।
হরিনাম সংকীর্তন কর দিবা রাত্রি।
তাহা হ’লে সবে তোমা করিবেক ভক্তি।।
কোকিলা নামিনী রাম সুন্দরের কন্যা।
পদুমা নিবাসী দেবী নারীকুল ধন্যা।।
রাম সুন্দরের ভার্যা তিন কড়ি মাতা।
সে বৃদ্ধা পরমা ধন্যা সতী পতিব্রতা।।
গিয়াছিল ক্ষেত্রে জগন্নাথ দরশনে।
জগন্নাথ রূপ তার লাগিল নয়নে।।
দেশে এল জগবন্ধু করি দরশন।
জগবন্ধু বলি সদা করিত রোদন।।
ভোর রাত্রি শুকতারা করি দরশন।
তখন হইত প্রেম ভাব উদ্দীপন।।
সূর্যোদয় অষ্ট সাত্বিক ভাবের উদয়।
স্বেদ পুলকাশ্রু কম্প রৌদ্র বীর ভয়।।
কাঁদিতে কাঁদিতে বৃদ্ধা হয়েন উন্মত্তা।
উত্তার নয়ন হন ধরাতে লুণ্ঠিতা।।
প্রভাতে উদিত হ’ল তরুণ তপন।
দেখেন জগবন্ধুর শ্রীচন্দ্র বদন।।
সেই রত্নগর্ভ জাতা শ্রীকোকিলা দেবী।
সতী অংশে জন্ম সেই পরমা বৈষ্ণবী।।
মায়ে ঝিয়ে তাহারা তোমার ভক্ত হবে।
আত্ম স্বার্থ ত্যজি তোমা ভকতি করিবে।।
তাহা শুনি হৃষ্ট চিত্তে কহে মৃত্যুঞ্জয়।
যে আজ্ঞা তোমার প্রভু যাইব তথায়।।
একামাত্র গেল পদুমায় মৃত্যুঞ্জয়।
চণ্ডীচরণের বাটী হইল উদয়।।
বৎসরেক পদুমায় থাকিলেন গিয়া।
নিরবধি হরি গুণ বেড়ান গাহিয়া।।
দিবা মধ্যে প্রহরেক গৃহকার্য করে।
হরি কথা কৃষ্ণ কথা গোষ্ঠে কাল হরে।।
ঠাকুরের যুগ ধর্ম করিল প্রচার।
ক্রমে সব লোক ভক্ত হইল তাহার।।
সবে বলে আপনাকে যেতে নাহি দিব।
আমরা সেবক হয়ে এদেশে রাখিব।।
পূর্বে প্রভু শ্রীমুখে করিয়াছি ব্যক্ত।
সমাতৃক কোকিলা হইল তার ভক্ত।।
হরিনাম মহামন্ত্র জপে নিরবধি।
অল্পদিনে কোকিলার হইল বাকসিদ্ধি।।
পদুমা আইচপাড়া শ্রীকালীনগর।
প্রভুর ভাবেতে সবে হইল বিভোর।।
কোকিলাকে ভক্তি করে এ দেশে সবায়।
কোকিলার দোঁহাই দিলে ব্যাধি সেরে যায়।।
ওলাওঠা, বিসূচিকা জ্বর অতিসার।
রসপিত্ত আর দ্ব্যাহিক ত্রাহ্যিক জ্বর।।
থাকেনা তাহার ব্যাধি অমনি আরাম।
মহাব্যাধি সারে নিলে কোকিলার নাম।।
রোগী শোকী ভোগী যত জ্ঞানী কি অজ্ঞানী।
কোকিলাকে ডাকে সবে মাতা ঠাকুরাণী।।
বৎসরেক হরিনাম করিয়া প্রচার।
মৃত্যুঞ্জয় রহিলেন সে কালীনগর।।
সকলে সাহায্য করি তুলে দিল ঘর।
ঠাকুর করহ বাস ইহার ভিতর।।
কাশীশ্বরী ভার্যা তার সুভদ্রা জননী।
দোঁহে আছে মল্লকাঁদি যেন কাঙ্গালিনী।।
মৃত্যুঞ্জয় ওঢ়াকাঁদি যাতায়াত করে।
মাঝে মাঝে দেখা দেয় সুভদ্রা মায়েরে।।
কাশীশ্বরী মৃত্যুঞ্জয় সুভদ্রা সুমতি।
তিন জন প্রভুর সেবায় আছে ব্রতী।।
মহাপ্রভু আজ্ঞা দিল তাহাদের প্রতি।
সকলে কালীনগরে করগে বসতি।।
অদ্য নিশি গতে কল্য প্রভাত সময়।
শুভক্ষণে কর যাত্রা বুধের উদয়।।
প্রভু আজ্ঞা শিরে ধরি অমনি চলিল।
আসিয়া কালীনগর বসতি করিল।।
গোঁসাই কালীনগর বসতি বিরাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।