নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
ব্রাহ্মণ্যবাদকে অধিকাংশ মানুষই ঘৃণা করে, তবুও টিকে আছে কেনো?!
বিচারে-সচেতনতায় মানুষ ব্রাহ্মণ্যবাদকে ঘৃণা করে, পরিত্যাগ করতে প্রয়াস পায়। কিন্তু সকলেই কোনো-না-কোনোভাবে মনে-মননে অবচেতনচিত্তে ব্রাহ্মণ্যবাদ লালন করে এবং সচেতনতার আড়ালে অচেতনভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদ পালন করে।
বিশেষত পরিবারে-সমাজে-দেশে তুলনামূলক উচ্চপদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলে এবং তুলনামূলক উচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলে মনে-মননে যে ঘৃণ্য অথচ সুপ্ত ব্রাহ্মণ্যবাদ লুকিয়ে থাকে, তা প্রকাশিত হতে শুরু করে।
কেউই বাস্তবের উত্থান-পতনকে মেনে নিতে চায় না, সর্বদা অধিক প্রাপ্তির আশায় থাকে- সে সম্মান হোক কিংবা অর্থ-সম্পদই হোক; আর যেনো-তেনো প্রকারেই তার বর্তমান অবস্থা ধরে রাখতে চায় বা আরো উচ্চতর অবস্থা নিতে চায়। আর মানুষের এই অবদমিত চাওয়াই ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রবেশের দ্বার। সে তার কর্তব্য-দায়িত্ব ভুলে অনৈতিক সুবিধা নিতে থাকে কিংবা তার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে থাকে, এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে তার অবস্থা অটুট রাখতে চায়। তার এই চাওয়াই তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। শাসন-শোষণ-ত্রাসনেও পিছ পা হন না।
সেকারণেই দেখতে পাই সর্বোচ্চ পদমর্যাদার ব্যক্তি হতে সমাজের সর্বনিম্ন স্তরের মানুষের মধ্যেও স্তরে স্তরে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরাজ করে। হয় তো মানুষের প্রবণতাকে মানুষ ব্রাহ্মণ্যবাদের স্থলে ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকে; কিন্তু গুণগত ও প্রক্রিয়াগত দিক দিয়ে তা ব্রাহ্মণ্যবাদেরই সমতুল্য।
সেই কারণেই এখনো দেখা যায় গ্রামের মোড়ল বিচার করে ২০ বোতল দেশি মদ দাবি করছে; কিংবা আগেরবার সবাইকে নিমন্ত্রণ করেনি, তাই আবার সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর বিধান দেয়, আগের বার সবাইকে না খাওয়ানোর অপরাধে।
মনে রাখতে হবে, ব্রাহ্মণ্যবাদ শুধু ব্রাহ্মণের দ্বারাই পরিচালিত হয় না; আমরা যারা ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধিতা করি, তাদের দ্বারাও পুষ্ট হয়, হচ্ছে।