নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
পয়ার
পুনর্বার লোটাইয়া শ্রীনাথ চরণে।
স্তব করে অশ্রুধারা বহে দ্বিনয়নে।।
যে রূপে আমার মন করিলে হরণ।
আর বার সেই রূপ করহ ধারণ।।
লঘু ত্রিপদী
তব তত্ত্ব, জানে মাত্র, দেব শূলপাণি।
আমি অজ্ঞ, অসৌভাগ্য, কিছুই না জানি।।
তুমি হর্তা, তুমি কর্তা, সৃষ্টি অধিকারী।
তুমি আদি, গুণনিধি, ক্ষীরোদবিহারী।।
ক্ষীরোদেতে, যে কালেতে, ছিলেহে শয়নে।
দেবগণ, উচাটন, তোমার কারণে।।
দেব সব, করে স্তব, রাবণের ভয়।
লঙ্কানাথ, শঙ্কাতাত, করহ অভয়।।
অবনীতে, অযোধ্যাতে, রামরূপ ধরে।
জনমিলে, ক্ষত্রকুলে, দশরথ ঘরে।।
সূর্যবংশে, চারি অংশে, শ্যামল সুন্দর।
দূর্বাদল, নীলোৎপল, নব জলধর।।
চারুপদ, কোকনদ, জিনি শতদল।
মীন অক্ষ, রোম সূক্ষ্ম, ভ্রুযুগ শ্যামল।।
দেহগতি, সীতাপতি, ভকত বৎসল।
ত্যজিবাস, পীতবাস, পিন্ধহে! বল্কল।।
রক্তকর, ধনুঃশর, শোভাকরে করে।
রিপু বংশ, কর ধ্বংস, গিয়া লঙ্কাপুরে।।
নাম বলে, ভাসে শীলে, সাগর ভিতর।
তব গুণে, বাধ্য বনে, ভল্লুক বানর।।
পশুগণ, অনুক্ষণ, রামগুণ গায়।
কি গুণেতে, সাথে সাথে, কাঁদিয়া বেড়ায়।।
কিমাশ্চার্য, দয়া ধৈর্য, দেখা’লে সকলে।
মিতা বলে, গিয়াছিলে, চণ্ডালের কোলে।।
ব’লে মিত্র, সুপবিত্র, সুগ্রীবে করিলে।
ঋষ্যমুখে, এ দাসকে, প্রেমভক্তি দিলে।।
যে রূপেতে, প্রথমেতে, ভুলাইলে মন।
সেই রূপে, মন সঁপে, পবন নন্দন।।
বায়ু ছেলে, জিজ্ঞাসিলে, কিবা তব নাম।
তার স্থলে, বলেছিলে, মম নাম রাম।।
বীজ বর্ণ, শুনি কর্ণ, সব্য কর্ণ দিয়ে।
রামনাম, গুণধাম, দিলে শুনাইয়ে।।
পুনঃছলে, জিজ্ঞাসিলে, কি নাম তোমার।
গুণধাম, সেই নাম, বল আরবার।।
পুনর্বার, সেই নাম, বাম কর্ণ মূলে।
যত্ন করি, রাবণারি, উচ্চৈঃস্বরে বলে।।
যেই রূপ, নামরূপ, শুনা’লে দাসেরে।
সে রূপেতে, মনোরথে, উর দয়া করে।।
তুমি রাম, ভৃগুরাম, বামনাবতার।
দ্বাপরেতে, মথুরাতে, জনম তোমার।।
নিশিকালে, গোপকুলে, গেলে নন্দ ঘরে।
বাল্য খেলা, গোষ্ঠলীলা, ব্রজরাজ পুরে।।
মথুরায়, দ্বারকায়, লীলা চমৎকার।
ব্রহ্মদেশে, হ’লে শেষে, বুদ্ধ অবতার।।
কলিকালে, জনমিলে, শচীগর্ভ মাঝে।
জীব দায়, এ ধরায়, ভক্তভাব সেজে।।
সার্বভৌম, মনোরম, দেখে ষড়ভুজ।
রামরূপ, সুধাকূপ, দেখিলে সে দ্বিজ।।
শ্রীমুরারী, বিশ্বহরি, রামরূপ দেখে।
সেই রূপ, সে স্বরূপ, দেখা’লে দাসেকে।।
এবে লীলে, প্রকাশিলে, বড়ই অদ্ভুত।
শান্ত দান্ত, কৃপাবন্ত, যশোমন্ত সুত।।
আমি অতি, মুঢ়মতি, মরিয়াছিলাম।
ভগবান, প্রাণদান, এবে পাইলাম।।
কোথা যাব, কার হ’ব, আর কেহ নাই।
এ বিপদে, ও শ্রীপদে, দাসে দেহ ঠাই।।
রোগযুক্ত, ক’লে মুক্ত, পাশ মুক্ত কর।
বিশ্বরূপ, অপরূপ, রামরূপ ধর।।
যে রূপেতে, প্রথমেতে, মোহিলে আমায়।
মল্লকাঁদি, কাঁদি কাঁদি, দেখিনু তোমায়।।
স্তব শুনে, ততক্ষণে, রামরূপ হ’ল।
ধনু ধরি, জটাধারী, অমনি দাঁড়াল।।
সৌম তনু, রম্যজানু, করি দরশন।
স্থির নেত্র, বায়ু পুত্র, হইল তখন।।
নবঘন, রূপঘন, নিরীক্ষণ করে।
চাতকিনী, কুতুকিনী, যথা ঘন হেরে।।
রাম হ’য়ে, দেখা দিয়ে, পুনঃ লুকাইল।
বাতাহত, বৃক্ষবত, মূর্ছিত হইল।।
দয়া করি, করে ধরি, হীরামনে তোলে।
বলে হীরে, কেন ফিরে, ভাস অশ্রুজলে।।
আমি তোর, তুই মোর, কিছু নাহি আন।
তবে কেন, হ’লি হেন, তুই মোর প্রাণ।।
সঙ্গোপনে, হীরামনে, প্রভু কন বাণী।
বাছাধন, যা এখন, থাকিতে যামিনী।।
এ তারক, অপারক, পীতে এই সুধা।
ভক্তলোকে, পিয় সুখে, যাবে ভব ক্ষুধা।।