নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
দীর্ঘ ত্রিপদী
মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী, ওঢ়াকাঁদি যান তিনি,
লইয়া চলিল মৃত্যুঞ্জয়।
সঙ্গেতে তারকচন্দ্র, আর শ্রীগোলোকচন্দ্র,
সূর্য নারায়ণ সঙ্গে যায়।।
যোগানিয়া গ্রামে বাস, নাম গোলোক বিশ্বাস,
তিনি চলিলেন সেই সাথে।
বেলা অপরাহ্ণ প্রায়, কাশীমার পিত্রালয়,
উপস্থিত নিশ্চিন্ত পুরেতে।।
কাশীরাম ধর্ম পুত্র, মল্লিক শ্রীচন্দ্রকান্ত,
তিনি চলিলেন সে দিনেতে।
তারক শ্রীচন্দ্রকান্ত, দোহার মন একান্ত,
হীরামন পাগলে দেখিতে।।
ভজন মজুমদার, আসিয়া তাহার ঘর,
হীরামন দিল দরশন।
শীতকালে পৌষ মাস, গায় নাহি শীত বাস,
মাত্র একটি লেংটি ধারণ।।
চন্দ্রকান্ত দক্ষিণেতে, তারক বসি বামেতে,
তার মধ্যে বসি হীরামন।
দণ্ডেক মাত্র বসিয়া, ভূমেতে পড়ে লুটিয়া,
বলে তোরা কররে শয়ন।।
কাশীমাতার ভগ্নী, একখানি কাঁথা আনি,
হীরামন গাত্রোপরে দিল।
তিনি কন গোস্বামীরে, যাও প্রভু শয্যাপরে,
তারকে কোলে করি শুইল।।
তারকের হ’ল ভয়, হীরামন গায় গায়,
লাগিবে আমার অঙ্গ তাপ।
আমার পাপের দেহ, কামানলে সদা দাহ,
ভাবে কোথা হরিচাঁদ বাপ।।
এত ভাবি যোড়ি কর, হস্ত রাখি শিরোপর,
হরি পদ করিছে স্মরণ।
গোস্বামী কহিছে বাণী, আমি সব পাপ জানি,
উরু পরে দিলেন চরণ।।
পাপী তাপী উদ্ধারিতে, হরি এলেন জগতে,
যার আশা মোর হরিচাঁদে।
যেই যাবে ওঢ়াকাঁদি, সেত নহে অপরাধী,
তার পাপ মুছি বাম পদে।।
যে মোর হ’রেকে ডাকে, সে জন থাকুক সুখে,
আমার মনের অভিলাষ।
তার পাপ ঘুচাইব, শুভাশুভ আমি নিব,
যেই যশোমন্তসুত দাস।।
শয্যা হ’তে উঠিলেন, দক্ষিণ পদ দিলেন,
তারকের বক্ষের উপর।
তারকে করিয়া স্থির, গোঁসাই হ’ল বাহির,
বলে তোর নাহি কোন ডর।।
গাত্র কান্থা শিরে ল’য়ে, ঘরের বাহিরে গিয়ে,
বসিলেন পূর্বমুখ হ’য়ে।
হরি পদ ধোয়াইয়া, ক্ষণে উঠে ঝোঁক দিয়া,
জলে যায় কান্থা তেয়াগিয়ে।।
প্রাতঃকালে নামি জলে, পূর্ব মুখ হ’য়ে চলে,
ডেকে বলে যারে মৃত্যুঞ্জয়।
যাও হরি দরশনে, বিলম্ব করহ কেনে,
মোর হ’রে সুখে যেন রয়।।
মৃত্যুঞ্জয় চলে গেল, ওঢ়াকাঁদি উতরিল,
হরিচাঁদ দরশন করি।
প্রণমিয়া শ্রীপদেতে, মহাপ্রভু আজ্ঞামতে,
দেশে যাত্রা করিলেন ফিরি।।
ঈশ্বর মজুমদার, আসিয়া তাহার ঘর,
সে দিবস রহিল তথায়।
পরদিন প্রাতঃকালে, এসে মল্লকাঁদি বিলে,
হীরামনে দেখিবারে পায়।।
অগাধ জলের পরে, হাঁটিয়া গমন করে,
মৃত্যুঞ্জয় তরী বেয়ে যায়।
গোস্বামীর সন্নিকটে, যবে তরী বেয়ে উঠে,
সে সময় জলে সাঁতরায়।।
নৌকাপরে রেখে ব’টে, গলে বাস কর পুটে,
মৃত্যুঞ্জয় কহিছে তখন।
বলে গোস্বামীর ঠাই, মোর দেশে চল যাই,
তরী পরে করি আরোহণ।।
হীরামন বলে দাদা, নিজ তরী বাহি সদা,
তরঙ্গিণী নীরে ডুবি ভাসি।
নিতে তোমাদের দেশে, ইচ্ছা যদি মনে আসে,
তবে তোমাদের নায় আসি।।
মৃত্যুঞ্জয় হস্ত ধরি, উঠাইল যত্ন করি,
দ্রুতগতি তরী বেয়ে যায়।
মধুমতী নদী এসে, নদী মাঝ খানে শেষে,
হীরামন ঝাঁপ দিতে চায়।।
কেঁদে কয় মৃত্যুঞ্জয়, নামিও না ধরি পায়,
নামিলে পাইব বড় শোক।
প্রভু বলে কি বলিস, তুই ত আমারে নিস,
আমারে ত নেয়না গোলোক।।
মৃত্যুঞ্জয় উচাটন, গোলোক ধরিয়া চরণ,
কাঁদিয়া কহিছে উচ্চৈঃস্বরে।
জানিয়া আমার মন, গোঁসাই নামে এখন,
কাজ কিবা এ জীবন ধরে।।
মনে যা ভেবেছি আমি, গোঁসাইত অন্তর্যামী,
অন্তরেতে জানিয়া সকল।
এই নদী দিয়া পাড়ি, আগে যাব মম বাড়ী,
বাড়ী নিব লেংটা পাগল।।
লেংটি এনে দিলে কেহ, পরিতে বলিলে সেহ,
ওত কারু কথা না মানিবে।
যদি লেংটি নাহি পরে, গেলে বাড়ীর ভিতরে,
মেয়ে লোকে দেখে লজ্জা পাবে।।
না বুঝিয়া পাই কষ্ট, হারে মোর দুরদৃষ্ট,
কর্ম জালে বন্দী হইলাম।
অষ্ট পাশ মুক্ত যিনি, অন্তর্যামী শিরোমণি,
হেন পদ পেয়ে হারা’লাম।।
গোঁসাই কহিছে দাদা, হাঁদলে গাধার বাঁধা,
খাঁদা আধা দেহ নামাইয়া।
দেহ পড়ি দেহ পড়ি, মাসী বাড়ী মাসী বাড়ী,
সূর্য মাসী আছে ডুমুরিয়া।।
লেংটি পরে অবশেষে, সূর্য নারায়ণ বাসে,
গোঁসাই যাইয়া বসিলেন।
মাসী কই মাসী কই, আয় মাসী দেখে যাই,
গোঁসাই ডাকিতে লাগিলেন।।
সূর্য নারায়ণ এসে, দণ্ডবৎ হ’য়ে শেষে,
কর জোড়ে রহে দাঁড়াইয়া।
গোঁসাই কহেন মাসী, তোরে বড় ভাল বাসি,
মাসী মারে দেহ ডাকাইয়া।।
পাতলার মাসী যিনি, তাহারে কর রাঁধুনী
শীঘ্র তাড়াও গৌরের মেয়ে।
বাজারে হ’য়েছে টান, পাতলা পাত দোকান,
ক্রয় বাণ ফিরিয়া না যায়ে।
সূর্য হ’য়ে অতি স্ত্রস্ত, এনে এক নব বস্ত্র,
গোস্বামীকে দিল পরাইয়া।
লেংটি পড়িয়া ছিল, তারক তুলিয়া নিল,
লইলেন মস্তকে বাঁধিয়া।।
গোস্বামী বলে ডাকিয়া, সকলে লহ ভাগিয়া,
লেংটি ধরে করে কাড়াকাড়ি।
সবে করে ধরাধরি, একটু একটু করি,
সকলে সে লেংটি নিল ফাঁড়ি।।
কেহ গলে ঝুলাইল, কেহ মস্তকে বাঁধিল,
প্লীহা কি যকৃত ছিল যার।
কারু ছিল কাশি জ্বরা, ধারণ করিল যারা,
দুই দিনে রোগারোগ্য তার।।
বসন ফেলায়ে দিয়ে, গোঁসাই উলঙ্গ হ’য়ে,
যে সময় যাত্রা করিলেন।
মেয়ে লোক যত ছিল, গোস্বামীর কাছে এল,
প্রণামী শ্রীপদ সেবিলেন।।
গোঁসাই উলঙ্গ বেশে, গোলোক বিশ্বাস এসে,
এমন সময় উপনীত।
গোস্বামীর পদধরে, মেয়েরা রোদন করে,
দেখিয়া গোলোক চমকিত।।
গোলোক বিশ্বাস কাঁদে, ধরিয়া গোস্বামী পদে,
গোঁসাই কহিছেরে গোলোক।
যাইতাম তোর ঘরে, তুই নিলি না আমারে,
দেখিয়া নিন্দিবে যত লোক।।
তোর বাড়ী যত নারী, তাহারা লজ্জিতা ভারি,
নির্লজ্জ লোকের বাড়ী যাই।
মাসী বড় ভাল বাসে, আসিয়া মাসীর বাসে,
মাসী মার হাতে ভাল খাই।।
সূর্য নারায়ণ পরে, তামাক সাজিয়ে ধরে,
হুঁকা নাহি নিলেন গোঁসাই।
কলিকা উঠায়ে নিয়ে, তাহার অগ্নি ফেলিয়ে,
তামাক রাখিল মাত্র তাই।।
তামাক হাতে রাখিয়া, সূর্য নারায়ণে দিয়া,
বলে মাসী যতনে রাখিস।
কি ঘটে কার কপালে, উপকার হ’বে কালে,
খাইলে সারিয়া যা’বে বিষ।।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত, পান কর অবিরত,
খাইলে খণ্ডিবে ভব ক্ষুধা।
দীনহীন এ তারক, সুধা পীতে অপারক,
হরি লীলা সুধাধিক সুধা।।