নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
দীর্ঘ-ত্রিপদী
ঠাকুর বলেন বাছা, সাজ সাজিয়াছ সাচা,
এখন কি ইচ্ছা তোর মনে।
কহিছে রাম ভরত, আর নাহি কোন পথ,
বিকাইনু তব শ্রীচরণে।।
আর কাহা নাহি যা’ব, আন কথা নাহি কব,
আর নাহি অন্য অভিলাষ।
স্থান দিয়া শ্রীচরণে, রাখ প্রভু নিজ গুণে,
চরণে করিয়া নিজ দাস।।
অমনি ঠাকুর বলে, তোরে করিলাম কোলে,
যথা ইচ্ছা তথা কর কাজ।
এই ওঢ়াকাঁদি বাড়ী, এ বাড়ী তোমার বাড়ী,
বাড়ী মধ্যে তুমি মহারাজ।।
ইচ্ছামত খাও পর, যাহা ইচ্ছা তাহা কর,
হরিনাম কর নিরন্তর।
রাত্রিতে নিদ্রা যেও না, ঘরে যেন চোর আসে না,
নিদ্রা ত্যাগ কর এইবার।।
রহিল রামভরত, তাহার যা অভিমত,
সেই মত কাজ করে তথা।
দিবানিশি হরিনাম, তাহাতে নাহি বিরাম,
কভু মুখে নাহি আন কথা।।
প্রেম গদ গদ চিত্ত, সদাই নামেতে মত্ত,
অশ্রুপূর্ণ নেত্র সর্বক্ষণ।
নামে প্রেমে হ’য়ে ভোর, দেখি কোকিল ভ্রমর,
কৃষ্ণ রূপ হয় উদ্দীপন।।
কখন বা অনাহার, কখন করে আহার,
চারি পাঁচ দিন পরে খায়।
শাল্য আমন্য তণ্ডুল, মুগ ছোলার ডাউল,
ঘৃত পক্ক খিচড়ি পাকায়।।
এ ভাবে করেন বাস, হরিনামে মনোল্লাস,
পুকুরের ঘাটেতে যেতেছে।
দেখিল বাম দিকেতে, পশ্চিম ঘর কোণেতে,
শান্ত বসি মৎস্য বানাইছে।।
তাহা দেখি জ্ঞান শূন্য, ক্রোধে হ’য়ে পরিপূর্ণ,
বলে ওরে ডঙ্কিনী নারী।
কত পাপে পতি হারা, জীবন থাকিতে মরা,
পিশাচিনী মৎস্য মাংসাহারী।।
ধাইয়া যাইয়া কয়, তোরে আজ দিব ক্ষয়,
নহে তোরে তাড়াইয়া দিব।
করি মধুমতী পার, তোহারে দিব এবার,
এ দেশে না তোহারে রাখিব।।
প্রভু হরিচাঁদ ডেকে, জিজ্ঞাসিল ভরতেকে,
কি হ’য়েছে মোর ঠাই বল।
রামভরত কহিছে, কেন ডঙ্কিনী রহিছে,
এ বাড়ীতে প্রমাদ ঘটাল।।
মহাপ্রভু বলে তারে, মাফ কর অবলারে,
জ্ঞানহীনা এরা যে অবলা।
এ মৎস্য দেশের চল, মাংসাদি খায় সকল,
আগে ওরে না হ’য়েছে বলা।।
ক্ষমা কর অপরাধ, আমাকে কর প্রসাদ,
হেন কর্ম আর না করিবে।
ঘটাইল যে বিপাক, থাকে থাক যায় যাক,
থাকে যদি গোপন থাকিবে।।
ভরত কহিছে কথা, ডঙ্কিনী লুকা’ল কোথা,
প্রভু কহে পালিয়ে গিয়াছে।
থাকে যদি এ বাড়ীতে, রহিবেক গোপনেতে,
আর না আসিবে তব কাছে।।
ভরত কহে প্রভুরে, আসিলে না রেখ ওরে,
অসতে আসিতে দেহ পথ।
আর বা কহিব কারে, স্থান দেহ অসতেরে,
মহাপ্রভু তুমিও অসৎ।।
যথা ভরত রহিত, শান্ত নাহি তথা যেত,
ঠাকুর কহিত সে শান্তরে।
যেও না ভরত ঠাই, গেলে আর রক্ষা নাই,
গেলে বাছা বাঁচাবে না তোরে।।
দেশোয়ালী রাজপুত, না মানে যমের দূত,
দেব দৈত্য যম নাহি মানে।
ওরা মানে সূক্ষ্ম ধর্ম, আর মানে গুরু ব্রহ্ম,
আমি ওরে ভয় করি মনে।।
বীর রসে ভক্ত ওরা, সদা প্রেমে মাতোয়ারা,
ভক্তি গুণে ল’য়েছে বাঁধিয়ে।
বীর রসে ভক্তি ডোরে, বেঁধে নিয়াছে আমারে,
আমি আছি ওর বাধ্য হ’য়ে।।
ভরত হইল শান্ত, এই ভাবে থাকে শান্ত,
পলাইয়া দেখা নাহি দিল।
ভরতের মহাক্রোধ, ঠাকুর দিল প্রবোধ,
কবি রসরাজ বিরচিল।।