নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
পয়ার
ঠাকুরের আগমন রাউৎখামারে।
হরি সংকীর্তন হয় প্রতি ঘরে ঘরে।।
প্রভু সঙ্গে ফিরে ভক্ত সকল সময়।
হাসে কাঁদে নাচে গায় প্রফুল্ল হৃদয়।।
ওঢ়াকাঁদি হ’তে যান রাউৎখামার।
মাস পক্ষ সপ্তাহ থাকিয়া যান ঘর।।
প্রভু অল্প সময় থাকেন নিজ ঘর।
বেশী থাকে মল্লকাঁদি রাউৎখামার।।
মল্লকাঁদি মৃত্যুঞ্জয় ভক্ত শিরোমণি।
কাশীশ্বরী নাম ধরে তাহার গৃহিণী।।
তাহার সেবায় বাধ্য প্রভু অহর্নিশি।
প্রভু সেবা কার্য করে যেন সেবাদাসী।।
দুই তিন দিন কিংবা সপ্তাহ পর্যন্ত।
মৃত্যুঞ্জয় ভবনে থাকেন শান্তি-কান্ত।।
মল্লকাঁদি রাউৎখামার দুই গ্রামে।
থাকিতেন যতদিন সদা মত্ত প্রেমে।।
যে দিন থাকেন প্রভু যাহার আলয়।
তাহার হইত চিত্ত প্রেমানন্দময়।।
আন কথা আন শব্দ না ছিল কেবল।
ঘরে ঘরে পরস্পরে সুধা হরিবোল।।
কৃষিকার্য কৃষকেরা করে দলে দলে।
সতত সবাই মুখে হরি হরি বলে।।
গৃহকার্য সমাধা করিত দিবসেতে।
প্রভুর নিকট যেত সন্ধ্যার অগ্রেতে।।
যে গৃহেতে ঠাকুরের ভোজন হইত।
হইত লোকের ঘটা দুই তিন শত।।
কৃষ্ণকথা হরিনাম সংকীর্তন রঙ্গে।
সারা রাত্রি কাটাইত ঠাকুরের সঙ্গে।।
এক ঠাই হ’য়ে লোক দুই তিন শত।
নাম সংকীর্তন রঙ্গে রাত্রি কাটাইত।।
এই মত নাম গান হইত যে স্থান।
কেমনে যামিনী গত না থাকিত জ্ঞান।।
কখন হইত ভানু উদিত গগণে।
ভাবে মত্ত তাহা না জানিত কোন জনে।।
খেয়েছে কি না খেয়েছে তাহা মনে নাই।
চৈতন্য হইয়া বলে দেও দেও খাই।।
সময় সময় হেন হইত উতলা।
কেহ বলে ভাইরে ঘুচিল ভব জ্বালা।।
কেহ বলে পেয়েছিরে মনের মানুষ।
কেহ বা হুঁশেতে বলে কেহ বা বিহুঁশ।।
গড়াগড়ি পড়াপড়ি জড়াজড়ি হয়।
কেহ কার গায় পড়ে কেহ বা ধরায়।।
ঢলাঢলি ফেলাফেলি কোলাকোলি হয়।
ধরাধরি করি কেহ কাহারে ফেলায়।।
কেহ বলে পড়িয়াছি আর উঠা নাই।
পড়িয়াছি ভব কূপে তুলে নেরে ভাই।।
কেহ বলে কি শুনালি কহিলি কিরূপ।
হরি প্রেম বাজারে কি আছে ভবকূপ।।
কেহ বলে কি কহিলি হারাইলি দিশে।
এসেছে দয়াল হরি ভব কূপ কিসে।।
বীর রসে কেহ করে বীরত্ব প্রকাশ।
কেহ বলে শমনের লেগেছে তরাস।।
কেহ বলে ওরে ভাই আমি যে শমন।
মম ত্রাস নাই তার সার্থক জীবন।।
কেহ বা প্রলাপ করে হইয়া পুলক।
কেহ বলে কিসে তোর জনম সার্থক।।
এত বলি কেহ ধরে শমনের চুল।
আজ রে শমন তোরে করিব নির্মূল।।
সে জন কহিছে ভাই মের না আমারে।
কি দোষ করেছি আমি তোদের গোচরে।।
যে জন করয় পাপ তারে দেই সাজা।
পবিত্র চরিত্র যার তারে করি পূজা।।
কোন জন বলে জম কি কহিলি কথা।
পতিতপাবন এল পাপ আছে কোথা।।
তুই না করিতি যম পাপীর তাড়ন।
তেঁই তোরে বেঁধেছিল লঙ্কার রাবণ।।
রাবণ মারিয়া তোরে যে করে উদ্ধার।
সেই প্রভু হরিচাঁদ দয়াল অবতার।।
যে হরি করেছে তোর এত উপকার।
তার উপকার কিবা করিলি এবার।।
ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদ হ’য়েছে প্রকাশ।
পাপ তাপ দূরে গেল তিমির বিনাশ।।
হরিনামে জয়ডঙ্কা বেজেছে সংসারে।
এ দেশে পাতকী নাই নিবি তুই কারে।।
কহিছে শমন যেবা করে হরিনাম।
তাহার শ্রীপদে মম অনন্ত প্রণাম।।
গিয়াছে আমার গর্ব মেরনারে ভাই।
কি দোষ করেছি আমি হরিভক্ত ঠাই।।
এসেছে দয়াল হরি বলা’য়েছে হরি।
তোমাদের স্পর্শ হেতু হরিনাম করি।।
উপকারী হই আমি অপকারী কিসে।
হরিভক্ত হয় মানুষ আমার তরাসে।।
হরিভক্ত হ’য়ে কেন ধর মম চুল।
আমি হই হরিপদ ভজনের মূল।।
মম ডরে সবে করে সাধন ভজন।
হরিভক্ত রক্ষাকারী আমি একজন।।
যে জন প্রভুর ভক্ত যুগেতে যুগেতে।
অহৈতুকী হরিভক্ত বিনা আকাংখ্যাতে।।
ব্রহ্মত্ব ইন্দ্রত্ব পদ তুচ্ছ তার আগে।
আছি কিনা আছি আমি মনেও না জাগে।।
তার সাক্ষী শুন ভাই পাণ্ডব গীতায়।
কুন্তী যে প্রার্থনা করে শ্রীকৃষ্ণের পায়।।
শ্লোক
স্বকর্মফলনির্দিষ্টাং যাং যাং যোনীং ব্রজাম্যহম্।
তস্যাং তস্যাং হৃষীকেশ ত্বয়ার্ভক্তির্দৃঢ়াস্ত্ত মে।।
পয়ার
কলিরাজ্যে পাপ কার্যে সবে হ’ত বশ।
আমার ভয়েতে কেহ না করে সাহস।।
আমি যদি রাজ কার্যে না থাকিরে ভাই।
হরিভক্ত চূর্ণ হ’ত পাপীদের ঠাই।।
এনেছি তুলসী দল মিশ্রিত চন্দন।
ছেড়ে দেরে পূজি হরি চাঁদের চরণ।।
হরিভক্ত সঙ্গে অদ্য হইব মিলন।
করিব মধুর হরি নাম সংকীর্তন।।
সবে বলে যম এসে কীর্তনে মাতিল।
শমনের প্রতি ভাই হরি হরি বলি।।