নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
‘সূক্ষ্ম’ শব্দের অর্থ অনেক জ্ঞাণী মানুষের গবেষণালব্ধ সুগভীর জ্ঞান। ‘সনাতন’ শব্দের অর্থ চিরন্তন সত্য। আর চিরন্তন সত্য হচ্ছে সৃষ্টি তত্ত্বের মাটি, জল, বাতাস, তাপ। এই চার উপাদানের সমন্বয়ে জীবনের সৃষ্টি বা জন্ম। সৃষ্টি বা জন্ম যেমন সত্য, তেমনি সৃষ্টি বা জন্ম নেওয়া জীবের (প্রাণী, উদ্ভিদ) মৃত্যু বা ধ্বংস হবে এটাও সত্য। সৃষ্টির জীব ধ্বংস হয়ে মহাশূন্যে বিলীন বা স্ব স্ব উপাদানে মিশে যাবে। অর্থাৎ ক্ষিতি (মাটি), অপ (জল), তেজ (তাপ বা আলো), মরুৎ (বায়ু) ও ব্যোম (মহাশূণ্য) এই পঞ্চভুতের ভূমিকাই চিরন্তন সত্য অর্থাৎ সনাতন। এই সৃষ্টিতত্ত্বে এবং বিনাশতত্ত্বে পঞ্চভুতের বাইরে কিছু নেই। পঞ্চভুতের মধ্যে বিপরীত দু শক্তি ঋণাত্মাক ও ধনাত্মাক শক্তি। অর্থাৎ পিতৃশক্তি ও মাতৃশক্তির সমন্বয়ে জীবজগতের সৃষ্টি। প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টি, প্রকৃতির নিয়মে বিনাশ; এটাই সূক্ষ্ম সনাতন দর্শন। যাকে বলে চিরন্তন সত্য।
এই “সূক্ষ্ম সনাতন” – অর্থাৎ চিরন্তন সত্যকে মেনে নিয়ে সৃষ্ট জীবের সার্বিক কল্যানের জন্য সৎজ্ঞান, সৎকর্ম – এই দু’য়ের সমন্বয়ে সৃষ্ট জীবের কল্যান সাধন করার চিন্তাদর্শনই “ধম্ম”।
তাই “সূক্ষ্ম সনাতন ধম্মে” কোনো ব্যক্তি বিশেষ নয়; অনেক জ্ঞানী মানুষের সাধনা বা ধ্যান বা পরীক্ষিত গবেষণা লব্ধ জ্ঞানই গ্রহণ যোগ্য। তাই হরিচাঁদ ঠাকুর বলেছেন-
পূর্ব্বে ছিল মুনিগণ করিতেন ধ্যান।
এবে সেই ধ্যান হয় জ্ঞানেতে বিজ্ঞান।।
(হরিলীলামৃত ১ম সংস্করণ পৃঃ ৩৬)
এই উদ্ধৃতি প্রমান করে হরিচাঁদ ঠাকুর বহিরাগত আর্য সভ্যতা তথা সংকীর্ণ বৈদিক ধর্মের বিপক্ষে অবস্থান করে “সূক্ষ্ম সনাতন ধম্ম” দর্শনের কথাই প্রচার করেছেন। প্রচলিত অর্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিশেষে তিনি কোনো বিভাজন করেননি বা রাখেননি। অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুর ছিলেন সাম্যবাদের প্রতীক।