নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
তোটক ছন্দ
ভদ্রাভদ্র মিলে হ’য়েছে সভা।
ইন্দ্র সভা ন্যায় হ’য়েছে শোভা।।
ঝাড় লন্ঠনাদি মোমের বাতি।
নিশাযোগে যেন ভাস্কর ভাতি।।
চন্দ্র সূর্য যেন একত্র মিলন।
ভাতি প্রকাশে বাতি অগণন।।
অপূর্ব সে শোভা দেখে আনন্দ।
হর্ষে বিমর্ষ সুখে নিরানন্দ।।
কত স্থানে গিয়া গায়ন গাই।
হেন সভা কভু দেখিত নাই।।
অন্তরে হইল অনন্ত ভয়।
হরিচাঁদ রূপ ভাবে হৃদয়।।
সভাযোগ্য লোক আমি ত নয়।
অদ্য গানে কিবা ভাগ্যেতে হয়।।
মা! মা! বলিয়া ডাকিল যখন।
টলিল দুর্গাদেবীর আসন।।
মৃণ্ময়ী মূর্তি কাপিতে লাগিল।
কাটাম সহিত প্রতিমা টলিল।।
সভা সভাসৎ ছিলেন যত।
সকলে দেখিয়া হ’ল বিস্মিত।।
চক্ষে দেখে রাই চরণ সাহা।
মায়ের মূরতি দেখিল তাহা।।
তিন ভাই এসে সেই সভায়।
আনন্দের পদে পড়িয়া কয়।।
আজন্ম বান্ধব তুমি গো ভাই।
তব গুণে মাকে দেখিতে পাই।।
বহু দিন আমি এ পূজা করি।
এ রূপ নয়নে কভু না হেরি।।
তব আগমনে এসেছে মাতা।
তব পদে দাদা একটি কথা।।
সত্য কড়ার দেহ মম ঠাই।
শ্রীচরণে তব এই ভিক্ষা চাই।।
যতদিন থাকিব জীবমান।
মম বাড়ী দাদা করিবে গান।।
সত্যে বন্দি হ’ল হইয়া হর্ষ।
একারম্ভে গান চৌদ্দ বর্ষ।।
পরে গান করতে গেলেন ঢাকা।
স্বর্ণ দশভূজা মন্দিরে ঢাকা।।
এই রূপে গেল বৎসর নিন।
সঙ্গী দোহারে বলে একদিন।।
কোন মহারাজ সুবর্ণ দিয়ে।
দশভূজা মাকে দিল গঠিয়ে।।
আনন্দ বলেন সবে কি বল।
মায়ের মূরতি কোথায় র’ল।।
যেই খানে বাজে ঝাঁজ মন্দিরে।
মায়ের মূরতি সেই মন্দিরে।।
শুনে নিরানন্দ বলে আনন্দ।
তোদের বাক্যেত হইল সন্দ।।
মন্দির মাঝারে আমি ত যাই।
স্বর্ণময়ী মাকে দেখি ত নাই।।
পাষাণীর মেয়ে নিদয়া হ’য়ে।
ঢাকা ঢাকা আছে দেখা না দিয়ে।।
অন্ন নাহি খা’ব যা’ব মন্দিরে।
দেখি মা দেখা দেন কিনা মোরে।।
আজ যদি দেখা না দেন মাতা।
পাষাণে কুটিয়া ভাঙ্গিব মাথা।।
দয়াময়ী নামে কলঙ্ক র’বে।
পাথারে তারা নাম ভেসে যাবে।।
অনাহারে গেল মন্দির মাঝে।
রূপ কিবা সাজে পার্বতী সাজে।।
দশভূজা শিবা সিংহ বাহিনী।
দশ করে দশ অস্ত্র ধারিণী।।
ষড়ানন বামে শিকি উপর।
দক্ষিণে গণেশ সুলম্বোদর।।
চপলা বরণী জলধি সুতা।
সঙ্গে রঙ্গে রঙ্গে ভারতী মাতা।।
অসুর নাশিনী করিয়া দর্প।
বাম করে ধরে বিষধি সর্প।।
মহেশ মহিষী মহিষ দমে।
দশনে দংশিছে কেশরীযমে।।
সার্ধ ত্রিহস্ত সুলম্বিত কায়।
গলিত কাঞ্চন লাঞ্ছিত তায়।।
নিস্পদ আনন্দ দেখিয়া তাই।
কেঁদে কেঁদে দুঃখে ছেড়েছে হাই।।
গুপত তপত কাঞ্চন বর্ণে।
দয়াময়ী দুর্গে! হে অন্নপূর্ণে।।
গেল দুঃখে দিন তাতে ক্ষতি নাই।
চরমে যেন মা চরণ পাই।।
রবিসূতে আক্রমিবে যখন।
এরূপে দর্শন দিও তখন।।
দয়াময়ী নাম রাখিতে জন্যে।
দীনে দেখা দিলে পাষাণ কন্যে।।
পূজক ব্রাহ্মণ ছিলেন যারা।
সঙ্গে সঙ্গে কান্না তুলিল তারা।।
পর বর্ষ ঢাকা গেল আনন্দ।
হরষে বিমর্ষ কি নিরানন্দ।।
সার্ধ ত্রিহস্ত দেখি মাতৃ রূপ।
এ বর্ষ দেখি বিঘত স্বরূপ।।
বিনয় বচনে কাতর স্বরে।
বলে মাগো বলি পদ নখরে।।
চঞ্চল মানস স্থিরতা নাই।
নবরূপ ধরি দেখালে তাই।।
এক মূর্তি প্রতি বর্ষ দেখিলে।
কল্পিতা ভাবিয়া যেতাম ভুলে।।
প্রতি বর্ষ নব মূরতি ধর।
দাস অবিশ্বাস বিনষ্ট কর।।
আনন্দ স্তাবক দুর্গাচরণে।
তোটক সুছন্দে তারক ভণে।।