নতুনের খোঁজে-নতুন দিগন্তে
পয়ার
রাজপাট বাসী লালচাঁদ মালাকার।
হরিচাঁদ পদে নিষ্ঠা ভকতি তাহার।।
বৈশাখ মাসের শেষ হইয়াছে আম্র।
সুখ দৃশ্য ফল ভরে শাখা সব নম্র।।
এক গাছে আম তার বড় মিষ্ট হয়।
‘বার্ষিক’ সে আম্র দেন প্রভুর সেবায়।।
প্রথম পাকিলে আম ঠাকুরকে এনে।
ঠাকুরের সেবা করে আনন্দিত মনে।।
কোনবার ওঢ়াকাঁদি দেন পাঠাইয়া।
কোনবার দেন আম কিনিয়া আনিয়া।।
মাঝে মাঝে মহাপ্রভু যান সে বাটীতে।
এবার হ’য়েছে মন ঠাকুরকে নিতে।।
আসিয়া প্রভুর সঙ্গে কথা নাহি কয়।
জেনে মন নারায়ণ তার বাড়ী যায়।।
একদা সকালে প্রভু বসিয়া নির্জনে।
একমাত্র তারক বসিয়া প্রভু স্থানে।।
হরিচাঁদ কহিলেন তারকের ঠাই।
চলরে তারক মোরা রাজপাট যাই।।
রাজপাট লালচাঁদ ক’ট করিয়াছে।
আমাকে খাওয়াবে আম সে খাইবে পাছে।।
গত হাটে পথপুরে আম কিনিয়াছে।
আর কত আম তার গাছে পাকিয়াছে।।
ঝাকা ভরি রাখিয়াছে তুলিয়া ঘরেতে।
আমি গেলে সেই আম মোরে দিবে খেতে।।
যাব কিনা যাব তাই ভাবি মনে মনে।
আমারে নিবে সে বেটা আসে বা না কেনে।।
তারক কহেন প্রভু যে ইচ্ছা তোমার।
ইচ্ছাময় তব ইচ্ছা, সে ইচ্ছা সবার।।
শুনিলাম শ্রীমুখেতে লালচাঁদ কথা।
আমার হ’য়েছে ইচ্ছা যাইবারে তথা।।
তাহা শুনি প্রভু কহে মনে হ’য়ে সুখী।
ক্ষণে থাক দেখি লালচাঁদ আ’সে নাকি।।
হেন কালে লালচাঁদ হইল উদয়।
পূর্বাকাশে রবি চারি দণ্ডের সময়।।
মাথে লম্বা চুল তার মুখে গোপ দাড়ি।
সন্ন্যাসীরা থাকে যেন বিশ্বেশ্বর বাড়ী।।
ঠিক যেন বন হ’তে পরমহংসেরা।
সুগন্ধেতে কাশী আমোদিত করে তারা।।
তেমতি বসিল এসে প্রভুর সম্মুখে।
ঠাকুর পরম সুখী লালচাঁদে দেখে।।
পরমহংস তাহারা উলঙ্গ থাকয়।
লালচাঁদ তেন কিন্তু উলঙ্গ সে নয়।।
ছিন্ন বস্ত্র দিয়া মাত্র পরিয়াছে লেংটি।
তার এক কোণা দিছে তাগা সঙ্গে আটি।।
নিতম্ব বাহির ঠিক উলঙ্গের প্রায়।
দূর হ’তে দেখিলে উলঙ্গ বোধ হয়।।
বরণ তাহার ঘোর কাল স্থুলাকার।
কাল অঙ্গ মধ্যে আলো করে দীপ্তকার।।
ঠাকুরের মুখ তাকাইয়া লালচাঁদ।
বদনে ঈষৎ হাসি অন্তরে আহলাদ।।
তাহা দেখি তারক ভেবেছে মনে মনে।
এই বুঝি লালচাঁদ বুঝি অনুমানে।।
পূর্বে ছিল কপিল বশিষ্ঠ বেদব্যাস।
পরাশর কাত্যায়ন কণ্ব দিগবাস।।
মরীচি অঙ্গিরা শতাতপ সতানন্দ।
গৌতম বাল্মিকী অত্রি সিদ্ধমুনি বৃন্দ।।
আজন্ম কাননবাসী মহাযোগে যোগী।
ইনি কোন মহাজন এল কিবা লাগি।।
যতি, হংসী, গৃহী, বনচারী, কি সন্ন্যাসী।
প্রভু সঙ্গে লীলারঙ্গে মর্ত লোক বাসী।।
ইতি উতি ভাবি বসিলেন সেইখানে।
ঠাকুরের বামে লালচাঁদের দক্ষিণে।।
এক হালসী কই মাছ আনিয়া ছিলেন।
ঠাকুরের সম্মুখেতে রেখে বসিলেন।।
ঠাকুর কহেন কি করিবি লালচাঁদ।
আম খেতে দিবি তোর মনে আছে সাধ।।
গাছে আছে আম আর কেন বা কিনিলি।
হাটে গিয়া বুঝি আম দেখে ভুলে গেলি।।
কেনা আম গাছে আম আমে আমদানী।
দুগ্ধ আমদানী কত বল তাই শুনি।।
ঠাকুর বলেন আর শুনাবি কি তাই।
দুগ্ধ আমদানী দোয়া আছে দুটি গাই।।
যারে লালচাঁদ কল্য আমরা যাইব।
মধ্যাহ্নে তোমার বাড়ী ভোজন করিব।।
মৎস্য দিকে লালচাঁদ চাহে বারে বারে।
প্রভু বলে মাছ কিছু দিবি নাকি মোরে।।
ঠাকুর কহেন তবে মন জেনে তারে।
উপরের চারি কই দিয়া যা আমারে।।
বড় চারি কই ছিল উপরেতে গাঁথা।
তাহা দিয়া লালচাঁদ নোয়াইল মাথা।।
অন্তঃপুর মধ্যে গিয়া প্রণাম করিয়া।
লালচাঁদ চলিলেন ঠাকুরে দেখিয়া।।
প্রভু বলে নিমন্ত্রণ করিলা আমাকে।
আদরের বস্তু এই চেন না তারকে।।
লালচাঁদ কই মাছ গলায় ধরিয়া।
কর যোড় করি চেয়ে রহে দাঁড়াইয়া।।
প্রভু বলে তারক করহ দরশন।
লালচাঁদ তোমাকে করেন নিমন্ত্রণ।।
লালচাঁদ নিম্নত্রিল কথা নাহি কয়।
মৎস্য হালসী হাটে গলে লইয়া দাঁড়ায়।।
করিতেছে লালচাঁদ বড়ই বিনয়।
কর যোড় তারক করিল সে সময়।।
তারপর লালচাঁদ বিদায় হইল।
বাহির বাটীতে আসি ঠাকুর বসিল।।
তারকে লইয়া প্রভু বসিলেন তথা।
বলিতে লাগিল সব মোহান্তের কথা।।
বেলা অপরাহ্ণ হ’ল সন্ধ্যার অগ্রেতে।
তারক চলিল প্রাঙ্গণেতে ঝাড়ু দিতে।।
রাত্রি হ’ল ঠাকুর বসিল বাটী মধ্যে।
ভক্তগণ বসিলেন ঠাকুর সান্নিধ্যে।।
ভোজন হইলে পরে স্বীয় স্বীয় স্থানে।
বঞ্চিলেন নিশি সবে হরষিত মনে।।
প্রভাতে উঠিয়া প্রভু তারকেরে কয়।
চল চল লালচাঁদ বাটী যেতে হয়।।
গিয়াছে ভোলা কুকুর সংবাদ দিয়াছে।
আমরা যাইব সে সংবাদ জানায়েছে।।
বলিতে বলিতে এল কাঙ্গালী বেপারী।
মৃত্যুঞ্জয় আসিলেন বলে হরি হরি।।
ঠাকুর বলেন সবে চল রাজপাট।
পথ বড় কম নয় সবে চল ঝাট।।
যাই যাই যাই বলে হইতেছে কথা।
হেন কালে লালচাঁদ পুত্র এল তথা।।
প্রভু বলে নিতে এল লালচাঁদ ছেলে।
শুভযাত্রা করে সবে হরি হরি বলে।।
যাইতে ভক্তের বাসে উল্লাসিত কত।
তিন দিন পর্যন্ত চাহেন প্রভু পথ।।
প্রভু হরিচাঁদ শ্রীরামচন্দ্র চৌধুরী।
মৃত্যুঞ্জয় বেপারী ও কাঙ্গালী বেপারী।।
এইরূপে যাত্রা করিলেন ছয় জন।
রচিল তারকচন্দ্র প্রভুর গমন।।